নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা-রাস্তাঘাট

ফেনীর সোনাগাজী

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নে বয়ে যাওয়া কালিদাস পাহালিয়া নদী তীরের পৃথক তিন এলাকা তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে নবাবপুর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর, উত্তর রঘুনাথপুর, মজুপুর মুখেরটেক এলাকার স্থানীয়দের বসতবাড়ি বিলীন হতে চলেছে। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বাড়ি বিলীন হয়ে প্রায় ৫০ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে দিনাতিপাত করছেন।

সরেজমিনে জানাগেছে, বন্যার পানির তোড়ে মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীনের পর ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ, আদর্শগ্রাম, পশ্চিম চরদরবেশ, কাজীর স্লুইচ গেইট, তেল্লার ঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনী পাড়া, চরচান্দিয়ার সাহেবের ঘাট, মোল্লার চর, পশ্চিম চরচান্দিয়া, বগদানানার আলমপুর, আউরারখিল, চর মজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, কুঠির হাট কাটা খিলা, কালি মন্দির, আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাদামতলী, গুচ্ছগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে হারাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, নবাবপুর ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ডের মধ্যদিয়ে কালিদাস পাহালিয়া নদী প্রবাহিত হয়েছে। এবার ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার সময় ইউনিয়নের এসব এলাকা ৬ ফুট থেকে ৮ ফুট পানিতে ডুবেছিল। পরে ২৮ আগস্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করলে নদীর কূলে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়। এরপর নদীর স্রোতের কারণে স্থলভাগের মাটি প্রতিদিন ভেঙে নদীতে পড়ছে।

পূর্ব সুলতানপুর, উত্তর রঘুনাথপুর, মজুপুর মুখেরটেক এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, মজুপুরের শুক্কর আহম্মদ, শাহাদাত, মফিজের ভিটেমাটিসহ ৭টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং শাহাবউদ্দিন, অটোরিকশা চালাক হোসেন, জসিমের ঘরবাড়িসহ ৩০টির অধিক বাড়ির আঙিনা এরই মধ্যে ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ায় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রসহ অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরে গেছে। এ ছাড়া রঘুনাথপুরে আমিরাবাদের বেড়িবাঁধ এরই মধ্যে রাস্তাসহ ভেঙে গেছে ।

স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ নদীর আগ্রাসী ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। কালীদাস পাহালিয়া নদীর উপর নির্মিত নবাবপুর ব্রিজটি নবাবপুর থেকে কসকা যাওয়ার একমাত্র আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক। ব্রিজটির চারপাশে নদীর কূল ভেঙে ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্রিজ সংলগ্ন পূর্ব সুলতানপুরে সংযোগ সড়কটিও এরই মধ্যে নদীর স্রোতের কারণে ১২ ফুট ভেঙে গেছে এবং স্থানীয় আব্দুল মান্নানের বসতঘরসহ ঝুঁকিতে রয়েছে, ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর পাড়ের আরো ১২০টি পরিবার। এর মধ্যে গুচ্ছগ্রামের পরিবার রয়েছে ৭৭টি। নদীর পাড়ের বাসিন্দা জাকির আহম্মদ বলেন, নদী ভাঙনের যে ভয়াবহতা দেখছি, এতে মনে হচ্ছে আমার বাড়িটিও ভেঙে যাবে। আমার দুই সন্তানের জন্য সম্প্রতিক বছরে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ করে দুটি দালান নির্মাণ করেছি। এগুলো এখন ইচ্ছে করলেও সরাতে পারবো না। শুধু আমরা নই, পূর্ব সুলতানপুরের নদীর পাড়ের আদর্শগ্রামে (গুচ্ছগ্রাম) এরশাদ সরকারের সময় থেকে ৭৭টি অসহায় পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। সেই পরিবারগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে। নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির জানান, নদীর কূল ভাঙনে ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের বাড়িঘর-আঙ্গিনা ভেঙে গেছে তাদের অনেক পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে এবং নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।