ঢাকা ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টানা বর্ষণে উখিয়ায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

টানা বর্ষণে উখিয়ায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

কক্সবাজারের উখিয়ায় টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো। পানিতে তলিয়ে গেছে আমন চাষাবাদ, ফসল ও পানের বরজ। তীব্র ঝড়ো বাতাসে কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে পড়েছে এবং গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পে পাহাড় ধসে নিহত হয়েছে একই পরিবারে ৩ রোহিঙ্গা এবং সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ রয়েছে ৩ মাঝি-মাল্লা। এইদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তভোগীরা। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার হলদিয়া পালং, জালিয়া পালং, রত্না পালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নে প্রবল বর্ষণের ফলে অন্তত শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।

তার মধ্যে রত্নাপালং ইউনিয়িনের পশ্চিম রত্না, সাদৃকাটা, রত্নাপালং, সওদাগর পাড়া, হলদিয়া ইউনিয়নের বাজারপাড়া, কুলালপাড়া, চৌধুরীপাড়া, বড়ুয়াপাড়া, জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া, সোনারপাড়া, ইনানীসহ উপকূলীয় এলাকা, রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল, হরিণমারা, মধ্য রাজাপালং ও পালং খালী ইউনিয়নের থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিল সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোও। একটানা বর্ষণে বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে গেছে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। বিদ্যুৎ না থাকায় যোগাযোগ করতে না পারায় আরো বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরের ৫টি ট্রলার পাটুয়ারটেক পয়েন্টে ভেসে এসেছে। এতে নিখোঁজ রয়েছে ট্রলারের ৩ মাঝি-মাল্লা। এইদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ক্যাম্প ১৪ হাকিম পাড়াতে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। ভূমিধসে একই পরিবারের তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।

নিহতরা হলেন, কবির আহমদের ছেলে আবদুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদ। এছাড়া কবির আহমদের বাড়িসহ তিনটি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ট্রলার মালিক আমির জানান, সাগরে ঝড়ের প্রভাবে ৫টি ট্রলার গভীর রাতে ভেসে এসেছে পাটুয়ারটেক পয়েন্টে। ট্রলারের ৩ জন মাঝি-মাল্লা এখনো নিখোঁজ রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রুমখা মনির মার্কেট এলাকার শফিউল আলম জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আশপাশের কয়েক গ্রাম। বন্যার পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

পশ্চিম রত্না গ্রামের বেলাল হোসেন সাঈদী জানান, গতকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকা রত্নাপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম রত্না গ্রামের (সওদাগরপাড়া, মসজিদ রোড, বড়ুয়াপাড়া, বাজারপাড়াসহ অন্যান্য পাড়া) তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে অত্র গ্রামে প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং গ্রামের প্রায় ৫০০-৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। মানুষ খুবই দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে এবং সরেজমিন আরো জানা গেছে, দুইদিনের টানা ভারী বর্ষণ-পাহাড়ী ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানিঢুকে কক্সবাজারের উখিয়ার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এতে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে, গ্রামীণ সড়ক লন্ডভন্ড কালভার্ট বিধ্বস্ত গাছপালা এবং পানের বরজ নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

জানা যায়, জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরীপাড়া, ঘাটঘরপাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়াছড়ি, বৌবাজার, কুলালপাড়া, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা,পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকার পাডা, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিলসহ প্রায় শতাধিক গ্রামে পানি তলিয়ে গেছে। চারদিকে পানি আর পানি। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ভারি বৃষ্টিতে জেলার উখিয়াসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেছেন রুমখা চৌধুরী পাড়া, বউ বাজার, পাগলির বিল, বড়বিল, মনি মার্কেট সহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। সবজি ক্ষেতসহ আমন মৌসুমের ধানের চাষাবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় মৎস্য চাষি আবদুল করিম ও হামিদ বলেছেন মৎস্য ঘেরে ও পুকুরে পানি ডুকে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, প্রবল পানির স্রোতে ধান চাষ, সবজি খেত ও পানের বরজ নষ্ট হয়েছে।

গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ কাঁচা রাস্তা ও কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এটিএম কাউসার। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারছে না তিনি। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, চলমান ভারী বর্ষণে উখিয়া উপজেলায় আরো পাহাড় ধস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পাহাড়ের উপরে ও ঢালে এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত সবাইকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে। প্রশাসন ও স্থানীয় ত্রাণ সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং পুনর্বাসনের কাজ করছে। এইদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় প্রশাসন ও ত্রাণ সংস্থাগুলো পাহাড় ধস ও বন্যাজনিত কারণে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং পুনর্বাসনের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত