ঢাকা ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিষদের ইঞ্জিয়ার ইকবালের সহায়তা

লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ফুলমালি রহিমের

লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ফুলমালি রহিমের

চাঁদপুর জেলা পরিষদের ৫টি প্রকল্পের কাজ না করেই জেলা পরিষদের ইঞ্জিয়ার ইকবালের সহায়তায় লাখণ্ডলাখ টাকা আত্মসাৎ করে ফুলমালি আব্দুর রহিম বেপারী আলিশান বাড়ি করার অভিযোগ উঠেছে। জেলা পরিষদের একজন সামান্য ফুল বাগানের মালি রহিমের আলিশান বাড়ি দেখে তার নিজ এলাকাবাসী হতভাগ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনাটি অনেকটা যেন আলাউদ্দিন চেরাগের মত ও আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়ার মত একটি ঘটনা বলে মন্তব্য সচেতন মহলের। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তা আমলে নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তদন্তটিমের কাছে জেলাবাসীর দাবি বিগত দিনে জেলা পরিষদের যে সকল প্রকল্পের কাজ হয়েছে। সে সব কাজ পুনরায় তদন্ত করা হলে কেঁচো খুঁরতে গিয়ে বড় আকারে সাপ বেড়িয়ে আসবে। তাই জেলাবাসী দাবি করছেন, বিগত কাজের তদন্ত করা হউক।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ৩ নং কল্যাণপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী গ্রামের ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের পাঁচটি প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে সেই টাকা জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেনসহ বাগানের মালি ভাগবাটোয়ারা করেছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কল্যাণদী গ্রামে জেলা পরিষদের প্রকল্পের মাধ্যমে কোন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করা হয়নি। প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে সেই টাকার লোপাট করার ঘটনায় স্থানীয় এলাকার জাকির মিজি নামে জনৈক ব্যক্তি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত টিম গঠন করে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এ সময় জেলা পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান মানিক, সার্ভেয়ার নাসির উদ্দিন, উচ্চমান সহকারী সায়েম পাটোয়ারী তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত টিমের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্পের কাজ না করানোর সত্যতা ও প্রমাণ পান।

কল্যাণদি গ্রামের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে চারটি প্রকল্পের আবেদন করেন জেলা পরিষদের বাগানের মালি আব্দুর রহিম বেপারী। তার নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে প্রকল্পের কাজ না করে টাকা জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেনসহ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠে। তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে একটিও কাজ করা হয়নি বলে সরেজমিন দেখতে পান।

এ সময় অভিযুক্ত জেলা পরিষদের ফুলমালি রহিম বেপারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নিজ বাড়ি করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন এর সহযোগিতায় প্রকল্প দেখিয়ে টাকা এনে বাড়ির নির্মাণের কাজ করেছি। এ বিষয়ে ইকবাল স্যার যে ভাবে করতে বলেছেন, সেভাবে আমি কাজ করেছি এবং স্বাক্ষর করেছি। সব টাকাতো আমি পাইনি আমাকে যে পরিমাণ দিয়েছে তা পেয়েছি। তবে এই ওয়ার্ডের বাকি প্রকল্পের কাজ ও টাকার ভাগাভাগি বিষয়ে জানে না বলে রহিম জানান। এদিকে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় আব্দুর রহিমের বাড়ির নির্মাণ ও তার পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য কোনো ধরনের প্রকল্প জেলা পরিষদ থেকে দেয়া হয়নি। এ বিষযে জেলা পরিষদের সদস্য মানিকুর রহমান মানিক বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্পের কাজ না কারোর সত্যতা মিলেছে।

তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পর এর সাথে যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। অভিযোগকারী জাকির মিজি জানান, জেলা পরিষদের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে কল্যান্দি ৪ নং ওয়ার্ডে বেপারী বাড়ির সামনের পুকুরে গাইড ওয়াল নির্মাণ, খোকন বেপারীর বাড়ির সামনে জনস্বার্থে টয়লেট নির্মাণ, দক্ষিণ কল্যাণদি রোডের পাশে ঘাটলা নির্মাণ, রহিম বেপারীর বাড়ির মক্তবের সামনে জনস্বার্থে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন, ৪ নং ওয়ার্ডে পুকুর পাড়ে গাইড ওয়াল নির্মাণকাজ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের কোনো কাজ না করিয়ে জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেনসহ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি জানান এলাকাবাসী। এদিকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের সব কয়টি ইউনিয়নে এভাবেই প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে ইঞ্জিনিয়ার ইকবালসহ টাকা ভাগাভাগি করার অনেক অভিযোগ উঠে আসছে। পর্যায়ক্রমে জেলা পরিষদের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র প্রকাশ পেতে সকল প্রকল্পগুলো তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পাবে বলে এলাকাবাসীর অভিমত।

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের ইঞ্জিয়ার ইকবাল হোসেন বলেন, আমার জানা মতে, যে সব প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। তা সঠিকভাবে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন পূর্বক করা হয়েছে। কাজের মান দেখার জন্য প্রতিটি কাজের স্থানে কয়েক দফা যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত