বগুড়ার কৃষকরা শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদন ও চাষে বর্তমানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করে বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রির সুযোগ থাকায় কৃষকরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। নার্সারিগুলোতে মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদিত হচ্ছে। এবছর নার্সারিগুলো থেকে ১০ থেকে ১২ কোটি চারা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা থেকে ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এসব চারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
কৃষকদের মতে, শীতকালীন সবজি চাষ তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি বড় সুযোগ। কারণ এ সময় সবজির বাজারমূল্য ভালো থাকে এবং ফলন ভালো হলে কৃষকরা ভালো লাভ করতে পারেন। তবে এর জন্য প্রয়োজন হয় উন্নতমানের চারা, যা কৃষকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বগুড়ার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা শীতকালের আগেই শীতকালীন সবজি যেমন মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সিম, লালশাক, পালংশাক চাষ শুরু করেছেন। এ বছর সবজির চারা ভালো হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে। প্রতি বছর জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চারা বিক্রি চলে, এবং প্রতিটি মৌসুমে ৮ থেকে ১০ কোটি চারা উৎপাদনের আশা থাকে। বীজতলায় চারা উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষকরা এখন শীতকালীন ফসলের জন্য তাদের জমি প্রস্তুত করছেন। তারা জমিতে জৈব সার প্রয়োগ, মাটি খোঁড়া এবং সেচের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কেউ কেউ নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদ করছেন, যাতে কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
এই চারা উৎপাদন ও বিক্রির মাধ্যমে বগুড়ার কৃষকরা উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতির মুখ দেখছেন, যা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় কৃষি অফিসগুলো কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। বীজতলায় শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদনে কৃষকদের এই ব্যস্ততা শুধু তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করছে না, দেশের কৃষি খাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। শীতকালীন সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকরা ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারলে, তা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জানা যায়, বগুড়াকে সবজি ভান্ডার বলা হয়ে থাকে। শীতকালিন সবজি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে। শীত আসবার আগে স্থানীয় চাষিরা আগামজাতের সবজি চাষ করে থাকে। আগামজাতের সবজিতে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে চাষিরা এই আগামজাতের সবজি চাষ করে থাকে। জেলায় এখনো শীত মৌসুম শরু না হলেও শীতের সবজি চাষ শুরু হয়েছে। জেলার উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষকরা জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলাসহ জেলার অন্যান্য উপজেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা। সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে, সারি সারি বিভিন্ন জাতের সবজির গাছ। তবে আশা করছে, কৃষকরা ভালো ফলন পাবে, সঙ্গে দামও ভালো পাবে। বগুড়ায় চাষকৃত সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে।