ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এখনো পানিবন্দি ৫ লাখ মানুষ

লক্ষ্মীপুরে আবারো প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম

লক্ষ্মীপুরে আবারো প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম

গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে লক্ষ্মীপুরে আবারো গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির আগে কিছু এলাকার পানি কমলেও তা এখন আবার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে লক্ষ্মীপুরবাসী দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়ছে। এখনো প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির পর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ঘরে ফিরলেও এখনো প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। বানভাসি এসব মানুষের অভিযোগ, তারা পর্যাপ্ত ত্রাণও পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত মৎস্য, কৃষি, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি। লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ছকিনা বেগম, শাহেদ আলীসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার-পরিজন নিয়ে রয়েছি। বন্যার প্রথম দিকে দিনে তিনবার খাবার পেতাম। দুবেলা ভাত ও খিচুড়ি এবং এক বেলা শুকনো খাবার। এখন আর আগের মতো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কষ্টে দিন কাটছে। পাশাপাশি ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কীভাবে সামনের দিন যাবে। সব অন্ধকার দেখছি।’ এমন অভিযোগ মিলেছে বাঙ্গাখা উচ্চবিদ্যালয়, রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ রামগঞ্জ ও রায়পুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের কাছ থেকে। তাদের দাবি, ত্রাণের জন্য তাদের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। সদর উপজেলার হোগল ডহুরী গ্রামের শাহেদ মিয়া ও কুলছুম বেগম বলেন, ‘রাস্তার পাশে যারা রয়েছে, তারা বেশ কয়েকবার ত্রাণ পেয়েছে। আর যারা কিছু দূরে পানিতে ভাসছে, তাদের পাশে ত্রাণ নিয়ে কেউ যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত একবারও ত্রাণ বা কোনো সহায়তা পাইনি। অর্ধাহারে ও অনাহারে খুবই কষ্টের মধ্যে ছেলেমেয়ে নিয়ে দিন কাটছে। কবে এসব দুর্ভোগ কমবে। বন্যার পানিতে ২৫ দিন ধরে বন্দি রয়েছি। এখন পর্যন্ত হাঁটুর ওপরে পানি।’ ৩০ বছরেও এমন কষ্টের মধ্যে পড়েননি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

সদর উপজেলায় তিন সপ্তাহ ধরে চলছে বন্যা। এর আগে ভারী বৃষ্টিপাতে আরও ৫ দিনের বেশি সময় ধরে ছিল ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। আবার জেলার কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার পূর্বাংশে এক মাস আগ থেকেই জলাবদ্ধতা শুরু হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় উজানের ঢলের পানি। জেলার রায়পুর এবং রামগঞ্জের অধিকাংশ এলাকাই বন্যাকবলিত। এতে দেখা যায়, জেলার কোথাও এক মাসের বেশি সময় ধরে লোকজন পানিবন্দি হয়ে সীমাহীন কষ্টে বসবাস করছে।

জেলা প্রশাসনের হিসাবমতে, ৮ লাখের বেশি লোক পানিবন্দি ছিল। এখনো পানিবন্দি প্রায় ৫ লাখের বেশি মানুষ। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, ১৯৮ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়। এখনো ২৫ হাজারের মতো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। তবে তাদের খাবারের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। জেলায় এখন পর্যন্ত ৭৮৯ টন চাল ও নগদ ৫৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। ক্ষতিগ্রস্ত সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছেছে। হয়তো বা যেভাবে সবাই আশা করছে, সেভাবে পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এরপর খোঁজখবর নিচ্ছি। এ দিকে রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সে সব কেন্দ্রে সরকারিভাবে কোনো ত্রাণই আসেনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত