সবজির চারা বিক্রি করে সংসার চালান তারা

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. তাজুল ইসলাম, তিতাস (কুমিল্লা)

ভোরের সূর্য উঠার আগে মোয়াজ্জিমের নামাজের আহ্বানে জেগে উঠে চাঁদপুর বাবুরহাটের জেলখানা গেটের ভাড়াটিয়া ইয়ামিন হোসেন (২৫)। শুধু ইয়ামিন নয়; জীবনের তাগিদে এ সময় জেগে উঠে পারভেজ হোসেন, ইলিয়াস আহমেদ, সাব্বির হোসেন, এনামুল হক ও তানভিরসহ ২০জন যুবক। চাহিদা মতো সবজির চারা নিয়ে ছুড়ে যান কুমিল্লার বিভিন্ন হাট-বাজারে। বর্ষা মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ চারা বিক্রি তাদের পেশা। আর সেই চারা বিক্রির করেই চলে এসব যুবকদের সংসার।

জানা যায়, বরিশালের বানারিপাড়ার বিশারকান্দি গ্রামের মো. চাঁন মিয়ার ছেলে মো. ইয়ামিন হোসেন। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইয়ামিন ভাইদের মধ্যে সকলের বড়। বড় বোন মোসা. ঝুমু আক্তারের অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। অবিবাহিত চার ভাইয়ের সকলেই জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েছেন। তারা যৌথ পরিবারে খরচ ও পিতা-মাতার ভরণপোষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারের বড় ছেলে ইয়ামিন উচ্চ শিক্ষা লাভের আশা থাকলেও সংসারের অভাব-অনটনের কারণে পঞ্চম শ্রেণিতে শেষ করতে হয়েছে শিক্ষা জীবন। প্রথমে স্থানীয় একটি দোকানে কর্মচারীর চাকরি করতেন। করোনার সময় সেই চাকরিটা চলে যায়। গত ২ বছর ধরে ইয়ামিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা হিসেবে তরমুজ, বোম্মায়া মরিচ, চারা বিক্রি করে আসছে। ইয়ামিন সপ্তাহের শনিবার দাউদকান্দি সদরে, রোববার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারে, সোমবার ও বৃহস্পতিবার মেঘনার মানিকারচর বাজারে, মঙ্গলবার দাউদকান্দির শহীদনগর বাজারে, বুধবার তিতাসের বাতাকান্দি বাজার ও শুক্রবার কড়িকান্দি বাজারে এ চারা বিক্রি করেন। চাঁদপুরের বাবুরহাটের জেলখানা গেটের সামনে বরিশাল বানারিপাড়া এলাকার ২০ জন যুবক ভাড়াবাসা নিয়ে থাকেন। কুমিল্লার বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাট-বাজারে তারা ভ্রাম্যমাণ চারা বিক্রিতা হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন ভোরে বরিশাল থেকে ওই ২০ জনের চাহিদা অনুযায়ী লাউ, শিম, বটবটি, বেগুন, পেঁপে ইত্যাদি চারা আসে চাঁদপুরে। সেখান থেকে চারা ভাগ করে প্রত্যেকে চলে যান কুমিল্লার এক এক এলাকায়। চারা বিক্রি করে রাতের মধ্যেই ফিরে আসেন চাঁদপুরের ভাড়া বাসায়। এভাবে চলছে তাদের প্রতিদিনের জীবন সংগ্রাম।

মৌটুপী গ্রামের মো. হযরত আলী জানান, বর্ষার পানি কমতে শুরু করেছে। বাড়ির ঝোপঝার পরিষ্কার করে চারাগুলো লাগাবো। শিম, লাউ ও বেগুনের চারা নিয়েছি। কড়িকান্দি গ্রামে মেয়েকে দেখতে আসা মঙ্গলকান্দি গ্রামের গৃহিনী হাজেরা বেগম চারা কিনতে গিয়ে বলেন, এর আগেও আমি চারা নিয়েছি। বাড়ির আঙিনায় চারাগুলো থেকে অনেক ফলন পাওয়া গেছে। তিনিও ইয়ামিনের কাছ থেকে তিন জোড়া চারা পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কিনে নেন। কড়িকান্দি বাজারে চারা বিক্রিকালে মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, বরিশাল থেকে চারা বিক্রির ডিলার মো. স্বপন ভাই প্রতিদিন আমাদের চারা সরবরাহ করে থাকেন। এলাকার চাহিদাভেদে আমি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ চারা বিক্রি করে থাকি। জোড়া হিসেবে প্রতিটি চারা ২০ টাকা করে বিক্রি হয়। আনুষঙ্গিক খরচ শেষে মাসে ১৫ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারি।