ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রামগঞ্জের বিরেন্দ্র খালে প্রাণের সঞ্চার

প্রায় ৪০ বছর পর
রামগঞ্জের বিরেন্দ্র খালে প্রাণের সঞ্চার

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বিরেন্দ্র খাল তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিষ্কার না করায় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ফেলা প্রতিদিনকার ময়লা-আবর্জনার কারণে খালটি নালায় পরিণত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

বিগত ১৮ দিন ধরে রামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রামগঞ্জ ব্লাড ডোনারস ক্লাবের সভাপতি মাহমুদ ফারুকের উদ্যোগে রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪০ বছর পর ওই খাল পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছে রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। ফলে খালটিতে এসেছে প্রাণের সঞ্চার দৃশ্যমান হয়েছে খালের দুই কিলোমিটার এলাকা। এখন দ্রুত বেগে পানি নামছে খালের দুর্গন্ধ আর নেই। এ কাজে আর্থিক ব্যয়ভার বহন করছেন রামগঞ্জ-সোনাপুর ও মৌলভী বাজারের ব্যবসায়ীরা। আরো ১০ দিন কাজ করার পর খালটি পুরোপুরিই দৃশ্যমান হবে। রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গত ১৮ দিন থেকে খাল পরিষ্কার অব্যাহত রেখেছেন স্বেচ্ছাসেবী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

গত ২৮ আগস্ট সকাল ১১টায় স্বেচ্ছাশ্রমের এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার ভূমি দেবব্রত দাশ ও রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সোলাইমানসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ। রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. শারমিন ইসলাম বলেন, তরুণ-যুবকদের এমন কাজকে স্বাগত জানাই। আজ তারা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের মতো সমাজের আরো স্বেচ্ছাসেবীসহ ভালো মানুষগুলো এগিয়ে এলে ছোট ছোট সমস্যাগুলো নিজেরাই সমাধান করতে পারবে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় ভালো কাজে পাশে থাকবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জ বাস টার্মিনালের পিছন থেকে সোনাপুর উত্তর বাজার ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গায় বাজারের ব্যবসায়ীরা ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার কারণে পানি নিষ্কাশন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ভয়াবহ বন্যায় পানি চলাচল করতে না পারায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়। সোনাপুর বাজারের ব্যবসায়ী মাস্টার আবুল হোসেন বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীরা যদি আন্তরিক হয় তাহলে এ খালটি আশীর্বাদ হবে। প্রশাসন এবং শহরবাসীর প্রচেষ্টায় দখলকারী, দূষণকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং খালটিকে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এ সময় তিনি পৌর কর্তৃপক্ষকে শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে আরো আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান। খালপাড়ে বসবাসকারী মো: ছেরাজুল হক জানান, এ খালটিতে একসময় পালতোলা নৌকা চলতো।

চাঁদপুর থেকে আসত চাল-ডাল, পেঁয়াজ-রসুনসহ নিত্যপণ্য। আর এ উপজেলা থেকে ঢাকায় যেত সোনালী আঁশপাট, নারিকেল-সুপারি ও কাগুজি লেবু। অথচ সে খালের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব। ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন, তারেক আজিজ ও রাজন জানান বিরেন্দ্র খাল পরিষ্কার একটি আধুনিক সুবিধাসংবলিত লেক পার্কে পরিণত করা সম্ভব। পরিষ্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে উপজেলা শহরের মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ফিরে পাবে। বিরেন্দ্র খালকে দখলমুক্ত করে বাঁচিয়ে রাখাটা জরুরি। রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদ ফারুক বলেন, খালে পানি আটকে প্রচুর মানুষ পানিবন্ধী হয়ে আছে। রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ভেকুমেশিন (খননযন্ত্র) সংগ্রহ করে এটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। দীর্ঘ ৪০ বছর পর খালটি পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত