সেতুতে সড়ক সংযোগ না করেই লাপাত্তা ঠিকাদার

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এ.এইচ.এম.আরিফ, কুষ্টিয়া

ডাকুয়া নদীর ওপর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা শহর-ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা সড়কস্থ পান্টি বাজার সেতুতে সংযোগ সড়ক না করেই লাপাত্তা ঠিকাদার। সেতুটিতে পাকা সংযোগ সড়ক না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এই এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। পাকা সড়ক থেকে সেতুর উচ্চতা প্রায় দুই-তিন ফিট। সেতুর দুই প্রান্তে প্রায় ৩০ ফিট দ্যৈর্ঘ্যরে মাটির কাঁচা সংযোগ সড়ক। তাতে বৃষ্টিতে স্যাঁতস্যাঁতে কাদা-পানি জমে আছে। কাদা-পানি মাড়িয়ে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা যানবাহনে চলাচল করছে। আবার কেউ সেতুর পাশের জরাজীর্ণ বিকল্প কাঁচা সড়ক দিয়ে চলছেন। তাতেও জমে আছে কাদা-পানি। গতকাল রোববার বৃষ্টি ভেজা সকালে সরেজিমন গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এলাকাবাসী জানায়, ডাকুয়া নদীর দুইপার ঘেষে ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজার। উপজেলার দ্বিতীয় শহর বলা হয় পান্টিকে।

উপজেলার চাদপুর, বাগুলাট, পান্টি ও যদুবয়রা ইউনিয়নের প্রায় কয়েক লাখ মানুষ চলাচল করে এই সেতু দিয়ে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার একাংশ কুষ্টিয়া শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এই পথে। প্রায় আড়াই বছর আগে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পুরাতন সেতুটি ভেঙে নতুন সেতুর কাজ শুরু করে ঠিকাদার। নানা তালবাহানার পরে সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। তবে সংযোগ সড়ক না করেই প্রায় ৪ মাস ধরে লাপাত্তা ঠিকাদার। পান্টি বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ বলেন, মাটির রাস্তা করে ঠিকাদার চলে গেছেন। সেখানে বৃষ্টির পানিতে কাদা জমে চলাচল করা যাচ্ছে না। গাড়িঘোড়া উল্টে যাচ্ছে। মালামাল নিয়ে বড় গাড়ি আসতে পারছে না। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সেতু ও সড়ক নিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পান্টি বাজার এলাকায় ডাকুয়া নদীর ওপর প্রায় ৮১ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতুর অনুমোদন দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। চুক্তিমূল্যে প্রায় ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকায় কাজ করছেন কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনীর রুমানা- জে ভি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুয়ায়ী ২০২১ সালে কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পুরাতন সেতুটি অপসারণ, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিসহ নানান অজুহাতে ঠিকাদার সময়মত কাজ শুরু করেনি। পরবর্তীতে কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে চলতি বছরে মে মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে সংযোড় সড়ক না করই চলে গেছেন ঠিকাদার। জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী জাহিদ হাসান ফোনে বলেন, প্রায় ১ কোটি টাকা বিল আটকে আছে। আবার এখন বালু পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য অনেকদিন হলো কাজ বন্ধ। এতে জনদুর্ভোগ হলেও তার কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন। কবে কাজ শুরু করবেন তাও তিনি জানেন না।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, কাজ বন্ধ রয়েছে অনেক দিন হল। ঠিকাদারের কিছু বিলও আটকে রেখেছেন তিনি। কাজ বন্ধের বিষয়টি তিনি চিঠি দিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কাদামাটির কারণে চরম জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বিষয়টি ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। বৃষ্টি শেষ হলে আপাতত চলাচলের সড়ক তৈরি করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, তিনি জনদুর্ভোগের কথা শুনেছেন। জেলার সমন্বয় সভায় তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছন।