ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বৃষ্টি পড়লেই পানিবন্দি দুই গ্রামের হাজারো মানুষ

বৃষ্টি পড়লেই পানিবন্দি দুই গ্রামের হাজারো মানুষ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ও শীলকূপ ইউনিয়নের পূর্ব শীলকূপ ও পূর্ব চাম্বল মিঠাই ফকির পাড়া এলাকার প্রায় হাজারো পরিবার জলাবদ্ধ অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। ২০০ বছরের পুরনো পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নালাটির উভয় পাশে (কালভার্টটির মুখ সংকুচিত) বন্ধ করে বিগত ৪ বছর পূর্ব থেকে আওয়ামী পেশিশক্তির রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে দোকান নির্মাণ করায় চার বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের। গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন তারা। ক্ষতি হচ্ছে মাছের ঘের, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন ফসলের। ভুক্তভোগীরা জানান, ২০২০ সালে আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের ছত্রছায়ায় শীলকূপ এলাকার প্রবাসী মো. ওসমান নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি টাইম বাজার দক্ষিণ পাশে পূর্ব শীলকূপ ও পূর্ব চাম্বল এলাকার ২০০ বছরের পুরনো পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নালাটির উভয় পাশে (কালভার্টটির মুখ সংকুচিত) বন্ধ করে দোকান নির্মাণ করেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা বাধা দেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেন। কিন্তু এর কোনো সমাধান হয়নি। ফলে ২০২২ সাল থেকে প্রতি বর্ষা মৌসুমে তারা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েন। বর্ষা শুরু হলেই তাদের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ, পুকুর, জলাশয় পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়ে। এ বছরও প্রবল বর্ষণে হাজারো পরিবার জলাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। গত সোমবার সকালে সরেজমিনে পরিদর্শন কালে পূর্ব চাম্বল মিঠাই ফকির পাড়া এলাকার মো. আবদুল জলিল, জাফর আহমদ, ও মৌলানা সিরাজুল হক জানান, জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরে-বাইরে পানিতেবন্দি হয়ে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছি। পাশের গ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাসায় গরু-ছাগল রেখে এসেছি। অনেক দূরে অন্যের বাড়িতে গিয়ে একবেলা করে খাবার রান্না করে আনছি। আমরা খেয়ে আছি নাকি না খেয়ে আছি কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। বিগত ৪ বছর যাবৎ এভাবে বর্ষা মৌসুমে আমরা পানিবন্দি হয়ে আছি। একদিকে বাঁশখালী ইকোপার্কের পানি আরেকদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি নালাটির কালভার্টের ২ পাশে অবৈধ ভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোর পূর্বক দোকান নির্মাণ করায় পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশন না হওয়ায় ২ হাজারের ও অধিক জনগণ এই কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। এরই মধ্যে ২১টির মতো মাটির ঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মধ্যে মো. হেলাল, জয়নাল জাকের, ইমাম হোসেন, ইউচুপ, আরিফ, জিয়াবুল, দেলোয়ার, জাহাঙ্গীর, মনির, মাহমুদুল ইসলাম, আবুল কাশেম, শফি, শাহেব মিয়া, নুরুল আলম, সিরাজুল হক, মো. ছগির, কোহিনুর আক্তার, মো. রফিক, বাবুল ও শামসুল হক। ওই এলাকার মো. হেলাল ও মো. নোমান জানান, কালভার্ট দিয়ে পানি যেতে পারছে না একারণে পূর্ব শীলকূপ ও পূর্ব চাম্বল এলাকার মানুষ ডুবেছে। মাছের প্রজেক্ট, আমন ক্ষেত, বীজতলা, মিষ্টি আলু, মরিচ, লাউ, হলুদসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পূর্ব চাম্বল ও পূর্ব শীলকূপ এলাকার মো. ইউছুফ ও মো. নজরুল জানান, আকস্মিক জলাবদ্ধতায় পাহাড়ি ঢলেভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার পুকুরে মাছ। তাদের ২টি বড় পুকুরের প্রায় ৮-১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে। মিঠাই ফকির পাড়া এলাকার আমির হোসেন জানান, তার পুকুরের প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে। পূর্ব শীলকূপ গ্রামের মো. রাসেল ও মো. আলমগীর জানান, গত চার দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কেউ আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেননি। বেআইনীভাবে কালভার্ট বন্ধ করে দোকান নির্মাণ করলেও স্থানীয় প্রশাসন গত তিন বছরেও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এবং পানি নিষ্কাশনেরও কোনো ব্যবস্থা করেনি। ২০২২ সালে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এবারো আমাদের পানিবন্দি হতে হয়েছে। আমরা টাকা-পয়সা ত্রাণ কোনোটাই চাই না। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা চাই। চাম্বল এলাকার মো. ফারুক হোসাইন জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে দিয়েছে। কিন্তু কয়েকজন মানুষ কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দোকান নির্মাণ করায় পানির গতিপথ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয় অভিযুক্ত সৌদি প্রবাসী মো. ওসমানের সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জেসমিন আক্তার জানান, আকস্মিক প্রবল বর্ষণে বাঁশখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত