যশোরের কেশবপুরে অতিবর্ষণে ২৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উপজেলার প্রায় ৮০টি গ্রামের মানুষ ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিম্ন অঞ্চলসহ বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, পুকুর, মাছের ঘের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রাম্য হাট বাজারসহ ১ হাজার ৮৪৪ হেক্টর জমির ফসল।
কেশবপুর উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিম্নচাপের প্রভাবে অতিবর্ষণের কারণে কেশবপুর উপজেলায় ২৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতিবর্ষণে ১ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমির আমন ধান প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আরো তলিয়ে গেছে ১২০ হেক্টর জমির সবজি, ১০ হেক্টর জমির মরিচ, হলুদ ১০ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন তরমুজের ৪ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
অতিবর্ষণের ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পাঁজিয়া, ত্রিমোহিনী, সাগরদাঁড়ি, মজিদপুর, সুফলাকাটি, কেশবপুর সদর ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের রাস্তাঘাটসহ আবাদ আমন ধানের খেত বেশি প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে শিগগিরই উপজেলার ১৪৪টি গ্রামের মধ্যে অধিকাংশ গ্রাম, বাড়িঘর, গ্রাম্য হাটবাজার ও হাজার হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের অফিস সহকারী রুস্তম আলী।
কেশবপুর পৌরসভার অধিকাংশ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পৌর সভার ১নং কেশবপুর ওয়ার্ডের সাহাপাড়ার বাসিন্দারা পানিতে ভাসছে, তলিয়ে গেছে পৌরসভার নিম্নাঞ্চলসহ হাবাসপোল, মধ্যকুল, আলতাপোল তেইশ মাইল, সরফাবাজ, বাজিতপুর, বায়সা, সাবদিয়া, শহরের হাবিবগজ্ঞ বাজার, চারআনি বাজার, কাঁচা তরকারির বাজার, মাছের আড়ৎ, পুরাতন মুরগি বাজার, থানা ভবনের দক্ষিণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রভাষক আলা উদ্দিন আলা বলেন, তার ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটি পানিতে তলিয়ে গেছে। তা ছাড়া ইউনিয়নের সব কয়টি এলাকা তলিয়ে গেছে। গ্রামের মানুষ বাড়ি ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ব্যাসডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রায় নিয়েছে ৩০টি পরিবার। তবে প্লাবিত এলাকায় পানি বেড়ে যাবে। সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মুনজুর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নের শত-শত কাঁচা-পাকা বাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ মন্দির প্লাবিত হয়েছে এবং তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মৎস্য ঘেরের ব্যবসা রয়েছে যা এরই মধ্যে শতশত মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে মাছ ভেসে গেছে। কেশনগর, সারুটিয়া, পূর্ব সারুটিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে।
মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পলাশ বলেন, তার ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। অনেক সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
কেশবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বাবু বলেন, এবারের বন্যায় প্রায় ২৫ টি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রশিদ বলেন, প্রায় ২০টি মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে মাঠের মধ্যে ও রুমে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলার মৎস্য অফিসার সজিব সাহা বলেন, আকাশ বন্যার ফলে শতশত মাছের ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে এবং হাজার হাজার মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। উপজেলার হাজার হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে শত কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
কেশবপুর উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তার অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উজানের পানির চাপে ও অতিবৃষ্টির কারণে শতশত কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ধসে পড়ছে। প্লাবিত হয়ে গেছে অনেক হাট বাজার ও রাস্তাঘাট। পাঁজিয়া-ডোঙ্গাঘাটা সড়ক, পাঁজিয়া, হদ , মাগুরখালি সড়ক প্লাবিত তলিয়ে গেছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুহিন হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।