শিক্ষকের বেত্রাঘাতে চোখ হারালো শিক্ষার্থী

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীর দাগনভূঞা পৌর এলাকার ওয়াজেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইদুল হাসান (১০)। গত ১৪ মে ক্লাসে অঙ্কে ভুল করায় বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মাইদুলকে মারধর করেন সহকারী শিক্ষক তাপস মজুমদার। এতে তার ডান চোখের ভেতরে কাঞ্চি ঢুকে যায়। মাইদুলকে প্রথমে দাগনভুঞার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করে চোখের ভেতর থেকে কঞ্চি বের করা হয়। এরপর ঢাকা চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দেড় মাস চিকিৎসার পর ভারতের চেন্নাই শংকর নেত্রালয়ে নেয়া হয়। তবে তার চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরানো যায়নি। এখন ডান চোখের পাশাপাশি বাম চোখেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ঘটনায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ করেন। এরপর ‘আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা মেলায় এরই মধ্যে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য ফেনী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা বেগম বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনায় ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমরা সরেজমিন তদন্ত করেছি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।’ এদিকে ঘটনার ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং অর্থাভবে সন্তানের অন্য চোখটিও হারানোর শঙ্কায় গতকাল বুধবার ফেনী শহরের একটি হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেছে শিশুটির পরিবার। আহত শিক্ষার্থী মাইদুল হাসান বলেন, ক্লাসে অংক ভুল কারায় স্যার আমাকে স্টিলের স্কেল দিয়ে মারতে শুরু করেন। স্কেল বাঁকা হয়ে গেলে একটা বাঁশের বেত দিয়ে আমাকে মারতে থাকেন। এ সময় বেতের আঘাত আমার ডান চোখে লাগে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। পরে অন্য একজন স্যার স্কুলের বেসিনে নিয়ে আমার চোখে পানি দেন। এরপর আমি আর কিছু বলতে পারবো না। এখন আমি আমার ডান চোখে দেখতে পারি না। স্কুলেও যেতে পারছিনা। এ জন্য আমি তাপস স্যারের বিচার চাই । সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসিনা আকতার বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলের জীবন আজ বিপন্ন। সে এক চোখে দেখতে পায় না। ডান চোখে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ায় অন্য চোখেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। একমাত্র ছেলের চিকিৎসায় এরই মধ্যে আমাদের জমানো সব অর্থ শেষ করে ফেলেছি। এখনো ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে পারিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক প্রথমে ঘটনার দায় স্বীকার করলেও এখন তার ভাই রাজেশ মজুমদারকে দিয়ে আমাদের নানা হুমকি ধামকি দেয়াচ্ছেন। আমার ছেলের সুন্দর জীবন, যে এমন বিষাদময় করেছে আমি সেই শিক্ষকের বিচার চাই এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক তাপস মজুমদারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তের ভাই রাজেশ মজুমদার বলেন, তাপস মজুমদার বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ভারত রয়েছেন। দুর্ঘটনা বশত শিক্ষার্থীর চোখে আঘাত লেগেছিল। পরিবারটিকে হুমকি দেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন।