ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ২৫ পরিবার দালালেল খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে টাকা ও ক্ষতিপূরণ ফেরত পেতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের গোয়ালনগর বড় বাজারে ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রবাস ফেরত নয় যুবক মানববন্ধনে অংশ নেন। এলাকাবাসীরা জানায়, গোয়ালনগর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে, ফরহাদ মিয়া, মামুন মিয়া ও আরমান মিয়া এবং একই ইউনিয়নের আব্দুল জলিল মিয়ার সিমের কান্দি গ্রামের ছেলে সায়েদুল মিয়া ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের লোকজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
গ্রামের বেকার যুবকদের র্টাগেট করে প্রথমে লিবিয়া পাঠানো হয়। তারপর সেখানকার স্থানীয় দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। সেই দালালরা যুবকদের মরুভূমিতে আটকে রেখে নির্যাতন করে। নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। যারা দাবিকৃত টাকা দিতে পারে তাদের নির্যাতর কম করা হয় এবং মাঝে মধ্যে কিছু খাবারও দেয়া হয়। আর যারা টাকা দিতে ব্যর্থ তাদের ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। সাত থেকে দশদিন পর্যন্ত কোনো খাবার দেয়া হয় না তাদের।
লিবিয়ায় আটক রেখে নির্যাতনের শিকার প্রবাস ফেরত নয় যুবকরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্ট্রগ্রাম উপজেলার বাংঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের রতানি গ্রামের মাহিন মিয়া, রাহুল মিয়া, আশরাফ মিয়া, হুসাইন মিয়া, রুবেল মিয়া, বায়জিদ মিয়া ও সোহাগ মিয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের আরফান মিয়া, অহিদ মিয়া ও হান্নান মিয়া, একই ইউনিয়নের মাছমা গ্রামের শামীম মিয়া, মোহাম্মদ হুসাইন, সাব্বির মিয়া, লালুয়ারটুক গ্রামের খায়রুল মিয়া, মামুন মিয়া ও মুক্তার হোসেনসহ ২৬ যুবক গত তিন বছর ধরে চার দালালের খপ্পরে পরে বিভিন্ন সময় টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। প্রবাসে জেল খেটে অনেকেই দেশে আসলেও আবার অনেকেই লিবিয়ার বিভিন্ন দালালদের হাতে আটক হয়ে অমানবিক জীবন পার করছেন বলে পরিবারের অভিযোগ। মানববন্ধনে থাকা মামুন, রাহুল, মাহিন, সুমন, আসাদ, খায়রুল, দেলোয়ার, অহিদ ও আজহারুল ওই দালালদের খপ্পরে পরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ প্রবাসে জেল খেটে দেশে ফেরত এসেছেন।
লিবিয়ায় আটক তফসির ও তাকবিরের বাবা এনামুল হক জানান, আমার দুই ছেলেকে ফরহাদ ও তার সঙ্গের দালালরা ইউরোপ নেয়ার কথা বলে অনেক টাকা নিয়েছে। বাড়ি বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। তা জানি না। আমার ছেলেকে ফেরত চাই। লিবিয়া আটক মিজবা উদ্দিনের বাবা শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেরে লিবিয়ার মাধ্যমে ইটালিতে পাঠানোর কথা বলে এগারো লাখ টাকা নিছে। এখন আমার ছেলে ফরহাদের হাতে বন্ধি আছে। আরো টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দিবে। কিন্তু টাকাও দিতে পারি না ছেলেরও কোনো খবর পাই না। লিবিয়া আটক যুবক জহিরুল ইসলামের বাবা মো. রাহান উদ্দিন বলেন, ছেলেকে ৭০ হাজার টাকা বেতনের কথা বলে লিবিয়ায় নিছে। দুইমাস রেখে ইতালি পাঠানোর কথা বলে আরো চার লাখ টাকা দাবি করে। জমি বিক্রি করে টাকা দিলে ছেলেকে লিবিয়ার দালালের কাছে বিক্রি কইরা দেয়। এখন আরো চার লাখ টাকা দিলে বাড়িতে পাঠাবে। অভিযুক্ত ফরহাদের মুঠোফোনে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর মোবাইল সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে বন্ধ করে দেয়। অন্য অভিযুক্ত সাইদুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসবের সঙ্গে জড়িত না। অন্য দুই অভিযুক্ত মামুন ও আরমান মিয়াকে মুঠোফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।