নদীভাঙনে দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীয়তপুর প্রতিনিধি

পদ্মার ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের চতুর্দিকে পদ্মাবেষ্টিত পাইনপাড়া চর। দীর্ঘ দুই মাসব্যাপী ভাঙনে ও আতঙ্কে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন পদ্মা সেতুর জিরো পয়েন্ট থেকে ৪০০ মিটার দূরে খোলা মাঠে। কেউ কেউ ঘর তুলতে পারলেও অনেকেই এখনো খোলা আকাশের নিচে রোদণ্ডবৃষ্টি উপেক্ষা করে ভাঙাচুরা চালের মধ্যেই বসবাস করছেন। উপজেলা প্রশাসন জুরুরি ত্রাণ সহায়তা দিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ ভাঙন কবলিতদের। ভাঙনঝুঁকিতে আছে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও মক্তবসহ দুই শতাধিক বসতবাড়ি এবং প্রায় ৬০০ হেক্টর আবাদি জমি। ভাঙনের কারণ হিসেবে শীত মৌসুমে চরের পাশের পদ্মা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারনে ভাঙন তীব্র হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। সরেজমিনে দেখা গেছে- দুই মাস আগে থেকেই পাইনপাড়া চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে পদ্মার পানি কমতে থাকায় গত ১০-১২ দিন থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। দ্রুত ভাঙন রোধের জরুরি পদক্ষেপসহ স্থায়ী ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পাইনপাড়া আলমখার কান্দি গ্রামের আব্বাস মোড়ল (৬৫) বলেন, শীতের সময়ে পাইনপাড়া চরের চতুর্দিক থেকে রাতের অন্ধকারে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে গত দুই বছর থেকেই আমাদের এই চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। এবার আস্ট মাসের প্রথম থেকেই ভাঙন শুরু হলেও গত ১০-১২ দিন যাবত ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতদিন নিজের ভিটেমাটিতে ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু দুই-একদিনের মধ্যে যদি বাড়ি-ঘর না সরিয়ে নেই তাহলে পদ্মায় পুরোটাই গ্রাস করবে। এখন পদ্মা সেতুর পূর্ব দিকে মাঝিরঘাটের পশ্চিমে খোলা জায়গায় গিয়ে অস্থায়ীভাবে থাকব। ভাঙনের কবলে পড়ে আমরা অনেক পরিবারই এখন নিঃস্ব ও ভুমিহীন। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া আমাদের পরিবারগুলোর জন্য যদি সরকার একটা জায়গার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে আমরা অন্তত মাথা গোজার ঠাই পেতাম। একই গ্রামের আলমগীর মাদবর (৫৭) বলেন, ২০-২৫ বছর আগে এই চরটি জেগে ওঠার পর থেকেই আমরা এখানে বসবাস করতে শুরু করি। বর্ষায় পদ্মার ভাঙনের সঙ্গে আমরা পরিচিত হলেও এই চরে বসবাস করতে এসে এখন অসহায় হয়ে পরেছি। এই চরের চতুর্দিকেই পদ্মা নদী। বর্ষাকাল আসলেই ভাঙন আতংকে আমাদের দিন কাটে। আত্মীয়-স্বজন অনেকেই সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাই সরকার যদি নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও সখিপুরের আদলে দ্রুত স্থায়ী রক্ষা বাধের ব্যবস্থা করে তবেই এই চরটি রক্ষা পাবে। তা না হলে পদ্মা এই পুরো চরটিকেই গিলে খাবে। পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন খান বলেন, ৮৫০ হেক্টর এলকা জুড়ে পাইনপাড়া চরটি জেগে ওঠার পর থেকেই সাড়ে চার শতাধিক পরিবার বসতি গড়ে তোলে। এই চরের দুইটি গ্রাম আলমখার কান্দি ও আহমদ মাঝি কান্দি। এরই মধ্যে দুই বছরের ভাঙনে দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হেয় ঠাঁই নিয়েছে অনত্র।