পানিতে নিমজ্জিত কষ্টের ফসল, দুশ্চিন্তায় কৃষক
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাঙ্খা পয়েন্টে ২১ দশমিক ১৫ মিটার পনির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে। আর পদ্মা নদীতে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২২ দশমিক ৫ মিটার। পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মহানন্দা ও পূণর্ভবা নদীতেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ৩ উপজেলায় ১ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এতে মাসকলাই, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, আখসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা করছেন নিমাঞ্চলের কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না।
কৃষকরা জানান, গত ৫ দিন থেকে ভয়াবহ রূপে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে নিম্নাঞ্চলের কৃষকের আবাদিজমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মাসকলাই, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, আখ, তিলসহ বিভিন্ন ফসলের জমি ডুবে গেছে। কৃষি অফিস জানায়, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলাজুড়ে এক হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ২১২ হেক্টর এবং শিবগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ১৫২ হেক্টর জমি রেেয়।
শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, সপ্তাহ খানেক আগেই প্রায় ৪ বিঘা জমিতে মাসকলাইয়ের বীজ বুনেছিলাম। হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব জমি ডুবে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে যদি পানি না নামে, তাহলে নিমাঞ্চল এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা সানাউল্লাহ বলেন, মাসকলাই বীজের অনেক দাম। দোকান থেকে বাকিতে বীজ কিনে জমিতে লাগিয়েছি। কালাই ওঠলে টাকা দিবো, কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে দেনা শোধ করায় মুশকিল হয়ে যাবে মনে হয়। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগেই অধিকাংশ চাষি জমিতে মাসকলাই বীজ বুনেছেন। পদ্মার পানিতে তাদের জমি ডুবে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে জমি থেকে পানি না নামলে এলাকায় মাসকলাইয়ের উৎপাদন অনেক হারে কমে যাবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আনিসুল হক বলেন, কৃষকরা তাদের জমিতে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। মাঠপর্যায়ের হিসেব অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাসকলাইয়ের জমি। অনান্য ফসলি জমিও ডুবেছে কিন্তু সেগুলো কম। আশা করা যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে এই পানি কমে গেলে, কৃষকরা ক্ষতির পরিমাণ কমবে। তারপরেও আমরা কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাদের সবধরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে গেছে। বন্ধ রয়েছে পাঠদানের কার্যক্রম। এমনই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নারায়ণপুর দারুল হোদা আলিম মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে মাদ্রাসার ক্লাসরুমগুলোয় পানি ঢুকেছে। সেজন্য রোববার থেকে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এই মাদ্রসায় প্রায় সাড়ে ৪০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যপ্রদানকারী কর্মকর্তা আবু সোয়েব বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। এতে করে জেলার নিমাঞ্চলের আবাদিজমিগুলো ডুবে গেছে। ধারণা করা যাচ্ছে- কয়েকদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে।