পমহেরপুরে দিন দিন বাড়ছে মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। ২৪ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জন ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত আগস্টে মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৮০ জন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৬ জন ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁজনসহ মোট ১৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১৪৪ জন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯৩ জন ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জনসহ মোট ২৫০ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪০০ জন। এ মাসের বাকি দিনগুলোতে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে যে বেড সংখ্যা রয়েছে তা রোগাীর সংখ্যার তুলনায় কম। ফলে সাধারণ রোগীদের বেডের পাশেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের একসঙ্গে রাখা হয়েছে। তবে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালে।
মশা নিয়ন্ত্রণে ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করার জন্য মেহেরপুর পৌরসভা ও গাংনী পৌরসভার বরাদ্দ ছিল। তবে স্প্রে করা হয়নি বলে অভিযোগ পৌরবাসীর। ওয়ার্ড পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকেও কোনো প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) চিকিৎসক আব্দুল আল মারুফ বলেন, অনেকে জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে রক্ত পরীক্ষা করার। সেই সাথে স্বাস্থ্য সচেতনতার কথাও বলা হচ্ছে। মশারি ব্যবহার করার পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হোক আর হেমোরেজিক হোক, এ সময় জ্বর হলেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ওষুধ নেয়া উচিত। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর আবারো ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তাই জ্বর হলেই সতর্ক থাকতে হবে। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মোহাম্মদ হাসিবুর সাত্তার বলেন, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কিট, আলাদা ওয়ার্ডসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সবখানে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন, যাতে সবাই ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক হতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা এবং জলাবদ্ধতা যেন না থাকে, সেই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মহিউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারনে মশা নিধনে শহরে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। শহর থেকে এডিস মশা এখন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে গেছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যতটুকু সম্ভব জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আশা করছি মশা নিধনে প্রশাসন শীঘ্রই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, পৌর শহরে মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গ্রামাঞ্চলেও প্রত্যেকটি বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার পরিছন্ন করতে বলা হয়েছে।