ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শাপলায় জীবিকা নির্বাহ শতাধিক পরিবারের

শাপলায় জীবিকা নির্বাহ শতাধিক পরিবারের

শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবার। কৃষিজমি পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোনো কাজ নেই। অনেক কৃষক বর্তমানে শাপলা আহরণের পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এ পেশায় কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক জীবিকা নির্বাহ করছেন শাপলা বিক্রি করে।

এবছর বর্ষায় সিরাজদিখান উপজেলার ডুবে যাওয়া বিভিন্ন ইরি, আমন ধান ও পাটখেতে শাপলা ব্যাপকভাবে জন্মেছে। এ ছাড়াও এলাকার ইছামতি খালের বিলের পানিতেও শাপলা ফুল ফুটেছে সৌন্দর্য আর নয়নাভিরাম দৃশ্য নিয়ে। শাপলা ফুল সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে মৌসুমের শেষ অর্থাৎ কার্তিক মাসে তেমন একটা পাওয়া যায় না। এলাকার শাপলা সংগ্রহকারী কৃষকরা ভোরবেলা থেকে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন এ কাজ চলে দুপুর পর্যন্ত। লতব্দী ইউনিয়নের চরনিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী রবিউল ইসলাম জানান, এ সময় একেকজন কমক্ষে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ মোঠা (৬০ পিস শাপলায় এক মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একত্রে করেন। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলায় শাপলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে নিয়ে পরে রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। উপজেলার চরনিমতলী গ্রামের পাইকার মল্লিক বাবু জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে ২ হাজার মুঠো শাপলা ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মুঠো শাপলা ২০ টাকা দরে ক্রয় করেন। তারপর গাড়িভাড়া গড়ে তিন টাকা, লেবার এক টাকা, আড়তদারি খরচ ২ টাকাসহ মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ী আড়তে প্রতি মোঠা শাপলা ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা দরে বিক্রি হয়। শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার। গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে।

ইছামতি নদী থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মনির হোসেন বলেন, আমি ১১ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে কাজের ফাঁকে ফাঁকে শাপলা তুলে বিক্রি করে সংসারের বাড়তি উপার্জন করে থাকি। এখন প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার টাকার শাপলা বিক্রি করতে পারি। চরনিমতলী গ্রামের পাইকার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা ক্রয় করে থাকেন। এক মোঠা শাপলা ১৫ টাকা দরে ক্রয় করেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসাটি এ উপজেলায় বেশ প্রশার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত বাড়তি অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ শুভ্র বলেন, বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার আনাচে-কানাচে সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে শাপলা। শাপলার বৈশিষ্ট্য নিরাপদ সবজি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার মুক্ত। সিরাজদীখানসহ মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিক হিসেবে শাপলা বিক্রি হচ্ছে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে। শাপলা বিক্রি করে প্রতি মাসে প্রায় দুই কোটি টাকার মতো উপার্জন করছে সিরাজদিখান উপজেলার শাপলা সংগ্রহকারীরা। তিনি আরো বলেন, কৃষি-সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশকৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ফলিত গবেষণা ইনস্টিটিউটের এদিকে নজরদিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত