ঢাকা ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘাস চাষে বছরে ছয় লাখ টাকা আয় করেন সাইকুল

ঘাস চাষে বছরে ছয় লাখ টাকা আয় করেন সাইকুল

সব মানুষই সৌখিন। শুধু অবস্থা ভেদে ব্যবস্থা। অতিতের তুলনায় মানুষের আর্থিক ক্ষমতা বেড়েছে। সেই সাথে বদলাতে শুরু করেছে তাদের জীবন-যাপনের ধরন। ক্রমেই ঝুঁকছেন তারা অধিকতর আরাম-আয়েশ ও সৌখীনতার দিকে। বিষয়টা অন্য অনেকের মতোই যেন উপলব্দি করতে পেরেছেন নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সেহড়াউন্দ গ্রামের কৃষক সাইকুল ইসলাম (৪৪)। সৌখিনদের শখ মেটাতে শখের বসেই তিনি পতিত জমিতে ‘লন কার্পেট’ ঘাস চাষ করছেন। বিক্রয় করে বছরে আয় করছেন পাঁচ-ছয় লাখ টাকা।

সৌন্দর্য বাড়াতে গৃহ-অভ্যন্তর ও বাড়ির লন বা আঙিনায় দৃষ্টিনন্দন দ্রব্য বা বস্তুর সমারোহ ঘটান সৌখীন পরিবারের লোকজন। ঘরের ভিতরে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি ফুল-ফল ও আঙিনায় কার্পেট স্থাপন এসবের অন্যতম। তবে সাইকুলের উৎপাদিত কার্পেট একেবারেই আলাদা, সম্পূর্ণ ‘জীবন্ত’।

সাইকুল বলেন, নিজের তেমন জমা-জমি নাই। বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আয়-রোজগার করি। করোনার কারণে ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকে এলাকায় কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পেটের তাগিদে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যাই। সেখানে মোহাম্মদপুর এলাকায় এক আত্নীয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে লন-কার্পেট ঘাস চোখে পড়ে। বিষয়টিতে আমি আকৃষ্ট হই। ফলে, এখানে কিছুদিন থেকে চাষ-বাস শেখার চেষ্ঠা করি। পরে বাড়ি ফিরে শখের বসেই ৮ শতাংশ জমি ইজারা ও এক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করি এই ঘাসের চাষ। বছর শেষে কিছু লাভ হয়, আগ্রহও বাড়ে। প্রতি বর্গফুট ঘাস ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রয় করা যায়। পরের বছর ৭০ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে কিছুটা বিস্তুৃত পরিসরে ঘাসের চাষ করি। এই ঘাস বিক্রয় করে সবকিছুবাদে বছরে আয় হয় ৬ লাখ টাকা। এই কাজ শুরুর সময় দুইজন লোক ছিল। বর্তমানে ১২ জন লোক কাজ করছে। আমার মতো তাদের পরিবারেও স্বাচ্ছন্দ ফিরে এসেছে, সকলের সন্তান-সন্ততিই এখন পড়ালেখা করছে।

এলাকার বাসিন্দা আবু রায়হান (২৭) নামের একজন বলেন, ‘সাইকুল ভাইয়ের কারণে ১২ জন লোক কাজ পাইছে। তারা প্রতিদিনি ৬০০ টাকা করে পায়। আগে এই লোকগুলো কাজের জন্য দূর-দুরান্তে যাইতো।’ জানা যায়, দেশের অনেক স্থানে বিভিন্নজাতের লন-কার্পেট ঘাসের চাষ হচ্ছে। সাইকুলের চাষ করা ঘাস মেক্সিকান-বারমুন্ডা জাতের, দেখতে অনেকটা কৃত্রিম ঘাসের মতো। তবে অধীক মোলায়েম। যথাযথ পরিচর্যায় এই ঘাস দীর্ঘকাল সতেজ ও বেঁচে থাকে। চাষের জন্য প্রথমে জমি ভালোভাবে সমান করে নিতে হয়। তারপর জমিতে বড়-মোটা পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর ১.৫ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি ঢালতে হয়। এই মাটির ওপর ৭ ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁক রেখে ঘাস রোপণ করা হয়। তারপর পানি ও সঠিক পরিচর্যায় ধীরে ধীরে ঘাস বড় ও সতেজ হয়ে বেড়ে উঠে।’ ১৫ দিন অন্তর ঘাসের মাথা কেটে কেটে সমান করে দিতে হয়। গ্রিষ্মকালে ঘাসের চারা লাগানো থেকে কার্পেট হিসেবে ব্যবহার উপযোগী হতে ৩ মাস সময় লাগে। আর শীতকালে এই সময় গিয়ে দাঁড়ায় ৬-৭ মাসে। গরমের সময় প্রতি বর্গফুট লন কার্পেট ঘাস ৭০/৮০ টাকায় বিক্রয় করা যায়, শীতে দাম বাড়ে। কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, কৃষক হলেও সাইকুল ইসলাম খুবই সৌখিন। প্রায় ৪ বছর আগে শখের বসে তিনি লন-কার্পেট ঘাস চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার বছরে আয় ৬-৭ লাখ টাকা। তাকে দেখে এলাকার অনেকেই এই ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমরাও বিষয়টার প্রতি নজর রাখছি। কেউ চাইলে আমাদের পক্ষ হতে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত