পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার সবচেয়ে বড় সবজির বাজার দাশুড়িয়ায় বাজারে। গতকাল শুক্রবার বাজার করতে এসে গৃহনির্মাণ শ্রমিক বাবর আলী বলেন- নিম্নচাপের প্রভাবে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে দৈনিক হাজিরার দিনমজুরদের এখন আর প্রতিদিন কাজ হয় না। সপ্তাহে যে কয়দিন কাজ হয় তাই কোনোমতে ডালে ভাতে দিন কাটাই দিচ্ছি। কারণ সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই পাঁচশ (৫০০) টাকা। সেই টাকায বাজার করতে দুটি বেগুন, কয়েকটি পাটল, আর আধাসের আলু কিনতেই প্রায় সব টাকা শেষ হয়ে যায়। বনবাদারের লতাপাতা ছাড়া আমাদের খেয়ে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই।
বাবর আলী জানান, বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে আমাদের মত লোকেরা আর কয়দিন বাদে না খেয়ে মরব! কারন যা কামাই করি তাতে তো সংসারের চাল কিনতেই শেষ। তেল নুন কিনব কি দিয়ে। কয়েকদিনের দরদাম যাচাই করে ঈশ্বরদী উপজেলার একাধিক সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৬০/২০০ টাকা, ফুলকপি ৮০, করলা ৮০, লাউ প্রতিটি) ৬০, পেঁপে ২৫/৩০ কেজি, বরবটি ৭০, কচু ৬০, বেগুন ৮০, পটল ৪০, ধুন্দল ৬০, ঝিঙা ৬০, ওল ১২০, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা (প্রতি কেজি), আলু ৫০/৫৫, পেঁয়াজ ১১০, রসুন ২২০/২৬০, আদা ৩০০, এবং ঢেঁড়স ৩০ টাকা প্রতি কেজি কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা, পুঁই শাক আঁটি ২০/২৫ টাকা, লাল ও সাদা শাকের আটি ১০ টাকা । মাছের বাজারেও নেই কোনো সুসংবাদ। ১ কেজি ওজনের প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০/৩৮০ টাকা কেজিতে, ৬ পিচে কেজি ইলিশের কেজি ৮৫০ থেকে শুরু, পাঙ্গাস ২২০, সিলভার ১৮০/২২০ টাকা (১ কেজি), তেলাপিয়া ২৭০, ছোট রুই ২৮০ থেকে শুরু, ছোট চিংড়ি ১০০০ টাকা, গুড়া মাছ ৬০০ থেকে শুরু। টেংরা মাছের কেজি চলছে ৪৫০ টাকা। ঈশ্বরদী পৌর কাঁচা বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ফরজ আলী বলেন, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে ঈশ্বরদীর অনেক সবজির খেত নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব কৃষকরা আগে মাল আনতো ভ্যান ভরে তারা এখন মাল আনে ব্যাগে করে সাইকেলের সাথে করে।
উৎপাদন কমে যাওয়ায় মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে মন্তব্য করেন এই বিক্রেতা। বাজার করতে আসা অটো চালক মো. লিটন বলেন, প্রতিদিনই সবজির দাম কিছু না কিছু বাড়তেই আছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আমরা সংসার চালাবো কি করে? দাশুড়িয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির আমদানি একেবারেই কম। তা ছাড়া অনেক কৃষকের খেত পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমদানি কম থাকায় সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা যেহেতু কিনেছি বেশি দামে, কমদামে বিক্রি করে কেমনে ? উপজেলা বড়ইচারা বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল আলিম বলেন, চারদিকের সব পানিতে ডুবে শেষ। এখন যা আছে তা দিয়েই কৃষক পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তারা বাজারে কোনো মালই কমদামে বিক্রি করেন না। তাই আমরাও কমদামে কিনতে পারিনি, বিক্রি করতেও পারিনি।