পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চরাঞ্চলের ৩৭ গ্রাম প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক দিনে ৩৭ সেন্টিমিটার পানি বাড়ায় নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে ফসলি জমি ডুবে গেছে। ফসলি জমি ও সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভাঙন আতঙ্কে আছে চরবাসী।
চারপাশে পানি ওঠায় এরই মধ্যে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে জানা গেছে, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে নদীতে পানি বাড়লেও শেষের দিকে কমতে শুরু করে। তবে হঠাৎ করেই এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি হু হু করে বাড়ছে। গত কয়েক দিনে ৩৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, পদ্মার পানি আবারো বাড়ছে। আরো কয়েক দিন বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। যেটুকু পানি বেড়েছে, তাতে চরাঞ্চল নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মানচিত্রের তথ্যমতে, পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ সেতু পয়েন্টে গত সোমবার বিকাল তিনটায় পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ৯৮ মিটার। মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে হয় ১২ দশমিক ১৫ মিটার। মঙ্গলবার একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার, যা বুধবার-বৃহস্পতিবার আরো ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বেলা তিনটায় পানির উচ্চতা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটারে। পদ্মায় সেখানে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। এখনো পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ইউনিয়নের ২১ গ্রামেই ফসলি জমি ও সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। দু’তিনটি গ্রামে বেশকিছু বাড়ির ভেতরেও পানি প্রবেশ করেছে। আরো পানি বাড়লে কয়েকটি বাড়ির উঠান পানিতে তলিয়ে যাবে। চরের আবাদি জমি সব ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। অন্তত চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা আসছে না। এতে স্কুলগুলোতে ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যার পানির সার্বিক বিষয়ে প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ১৬টি গ্রামের চারপাশে পানি চলে এসেছে। ফসলি জমি ডুবে গেলেও কোনো বাড়িতে পানি প্রবেশ করেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নুরুল ইসলাম বলেন, চরের জমিতে কোনো সবুজ অংশ নেই। এখন পানিতে সাদা হয়ে আছে। পদ্মায় পানি বাড়ায় ১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমির মাষকলাই ডুবে গেছে। এবার চরে ২ হাজার ২৩৪ হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষ হয়। এ ছাড়া পানিতে ১০ হেক্টর জমির মরিচখেত ও ৫ হেক্টর জমির কলাবাগান ডুবে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকাল খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এখনো কোনো বাড়িতে পানি প্রবেশ করেনি। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।