ঢাকা ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টানা বর্ষণে সাতক্ষীরায় ফসল ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি

টানা বর্ষণে সাতক্ষীরায় ফসল ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি

ভারি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় সাতক্ষীরা পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড, সদরের ১০টি ইউনিয়ন ও তালা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মোট ৭০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০ হাজারের বেশি পরিবার। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন জানায়, গত সপ্তাহের শনিবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চার দিনে ৯৬ ঘণ্টায় ২৫৬ মিলিমিটার ও গত বুধবার ভোর থেকে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তালা উপজেলার আহসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলন রহমান জানান, ভারি বৃষ্টির কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশের বেতনা নদীর পাউবোর রিংবাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ হোসেন জানান, সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার মধ্যকার ছাকার মোড় থেকে শাল্যে বাজার, তালতলা থেকে গোপীনাথপুর ডেইয়ের বিল, মাঠপাড়া থেকে গদাই বিল, শহরের রথখোলা সড়ক, কামানগর, মধুমোল্লারডাঙিসহ সদরের বেশ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে। ওই সব সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারেছ না। এ ছাড়া, সদর উপজেলার পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার ঘুড্ডেরডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, লবণগোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, ধুলিহর, বালুইগাছা, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবাস্তিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গী, মাছখোলা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, গোয়ালপোতা, তালতলা, শ্যালেসহ ৪০টি গ্রাম ও পৌর এলাকার অর্ধেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ২০-২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ওই এলাকাসহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার মাছ ও কাঁকড়ার ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে পুকুর, আমন ধান ও শাক-সবজির খেত। তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের আমিনুর রহমান ও নির্মল মণ্ডল জানান, তার সতের বিঘার একটি মাছের ঘের রয়েছে। তাতে এক লাখ টাকার রুই, কাতলা ও মৃগেলসহ নানা জাতের মাছ ছাড়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ওই ঘের। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাঁচ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৯ কোটি টাকার বেশি। কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন আমরা এই বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হওয়া জলবদ্ধতা যদি নিরসন করতে পারি, তাহলে শাকসবজি ও আগাম খাদ্যশস্য আবাদের দিকে অগ্রসর হতে পারবো। আশা করছি, আবার সাতক্ষীরা জেলা ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারবে। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, জেলায় গত কয়েক দিন অতিবৃষ্টির কারণে ও বেতনা নদীর বাঁধের একটা অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণে তার আশপাশের ঘেরগুলো পানিতে মিশে গেছে। এখানে মোট ৫ হাজার ২৩০ হেক্টর এরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পানিতে ভেসে গেছে অধিকাংশ মাছ। এতে মৎস্য চাষিদের ৭০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সেটিও ৪ কোটি টাকার অধিক। এ ক্ষতির হাত থেকে চাষিদের রক্ষা করতে সহজ শর্তে যদি ঋণের ব্যবস্থা করা যেত, অথবা তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা গেলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত