রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অবাধে আসছে চোরাই গরু
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
রাতের নিকষ কালো অন্ধকার। চাঁদের আলোয় কিছুটা আলোকিত ঘন জঙ্গলে ভরা জনপথ। সেই আলো-আঁধারির খেলায় কিছু মানুষের চোখে ঘুম নেই। মানুষ যখন গভীর ঘুমে, তখন তারা ব্যস্ত সীমান্তে। সীমান্ত গলে এপারে আসবে গরুর পাল। নির্ঘুম মানুষগুলোর অপেক্ষা সেই গরুর পালের জন্য। রাত যত গভীর হয়, ততই বাড়ে গরুর ঢল। সীমান্তের পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে একটু এগুলোলেই অপেক্ষায় আছে ট্রাকের বহর। সেই ট্রাকে দলে দলে সওয়ার হচ্ছে একের এক গরু। তারপর রাতেই আঁধারেই সেই ট্রাক চলে যাচ্ছে দেশের নানাপ্রান্তে। এভাবেই কাঁটাতারের ঘেরা, খরস্রোতা নদী আর পাহাড় পাড়ি দিয়ে ওপার থেকে আসা গরু মিশে যাচ্ছে বাংলাদেশের হাটবাজারে। যার নাম ‘বার্মাইয়া গরু’। কক্সবাজারের কাছের সীমান্ত উপজেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির কালাচাইন্দা এলাকায় এটাই নিত্যরাতের দৃশ্য।
দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারের ওপারে গরু এপারে আনতে চোরাকারবারিদের তাই ঘাটে ঘাটে দিতে হয় বখরা। সেই বখরা দিয়ে সীমান্ত পথে এই চোরাচালান হয়ে উঠে অত্যন্ত সরল ও মসৃণ। বিপরীতে সীমান্তরক্ষীদের চোখ এড়াতে চলে নানা কিসিমের কেরামতি। শুধু বান্দরবান কিংবা কক্সবাজার সীমান্ত নয়, দেশের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এভাবেই চোরাই গরু আনছে একাধিক বড় চক্র। এদিকে মিয়ানমার ও ভারত থেকে গরু আসবে না- সরকারের এমন ঘোষণায় দেশি খামারিদের বুকে আশা জাগলেও সীমান্ত দিয়ে দেদারচে গরু ঢোকায় তাদের সেই আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। তারা এখন লোকশানের শঙ্কায় পড়েছেন। সূত্র মতে, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও চকরিয়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির অন্তত ১০/২০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে সবচেয়ে বেশি গবাদি পশু ঢুকছে। স্থানীয়দের এমনটাই অভিযোগ।
অনুসন্ধান ও স্থানীয়রা বলছেন, গরু চোরাচালানের ক্ষেত্রে সীমান্ত পার করার জন্য দুই ধরনের লোককে কাজে নামায় চোরাকারবারি চক্র। একটি গ্রুপ গরুর সঙ্গেই থাকে; আরেকটি গ্রুপ রাস্তায় পুলিশ, বিজিবি থাকে কিনা, তা জেনে কারবারিকে খবর দেয়। তারা গরুপ্রতি এক থেকে দুই হাজার টাকা করে পায়। সীমান্ত পার হওয়ার পর দেশের কোনো হাট থেকে টাকার বিনিময়ে গরু কেনার নকল কাগজপত্রও তৈরি করে নেয়া হয়। এতে পথে আর পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয় না। রাতের আঁধারে সীমান্ত পার হওয়া গরু নির্বিঘ্নেই দিনের আলোতে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে পৌঁছে যায়। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির কম্বনিয়া, তুমব্রু, বাম হাতিরছড়া, ফুলতলী, চাকঢালা, লম্বাশিয়া, ভাল্লুকখাইয়া, দৌছড়ি, বাইশফাঁড়ি, আশারতলী ও জামছড়ি এবং কক্সবাজারের রামু উপজেলার হাজিরপাড়া, বালুবাসা, ডাক্তারকাটা ও মৌলভীরকাটা দিয়ে চোরাই পথে মিয়ানমারের গরু আসছে। সীমান্ত এলাকার লোকজনদের মতে, চিহ্নিত ১০/২০ ব্যক্তির নেতৃত্বে দুই শতাধিক চোরাকারবারি এসব এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরাই রাতের আঁধারে মিয়ানমারের গরু সীমান্ত পার করে ঢাকাসহ দেশের নানা হাটবাজারে পৌঁছে দিচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা গরু নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা বাজার, রামুর গর্জনিয়া বাজার ও ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাহ বাজারের রশিদের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়। এই তিন বাজারে রশিদ নিয়েই ট্রাক ভর্তি করে মহাসড়ক দিয়েই অবৈধ গরু বৈধপন্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে।