দ্বীপ জেলা ভোলার মধ্যেমনি লালমোহন উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পুরো উপজেলার ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। গড়ে প্রতিদিন এখানে ভর্তি রোগীই থাকেন ৭০ থেকে ৮০ জন। আবার কখনো কখনো এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় শতাধিকের উপরে। তবে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর এসব রোগী, চিকিৎসক এবং নার্সদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর এখানে বিকল্প হিসেবে রয়েছে জেনারেটর এবং আইপিএস-এর ব্যবস্থা। তবে আইপিএসটি দীর্ঘ দিন ধরে নষ্ট। আর জেনারেটরের তেলের বরাদ্দ না থাকায় তাও চালানো হচ্ছে না। এতে করে বিদ্যুৎ গেলে চরম বিপাকে পড়তে হয় চিকিৎসক, নার্সসহ ভর্তি রোগীদের। এনিয়ে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে।
বিদ্যুৎ যাওয়ার পর গরমের সময় দিনের বেলায় অসহনীয় গরমের মধ্যে থাকতে হয় চিকিৎসক, নার্স এবং রোগীদের। তবে রাতের বেলায় বিদ্যুৎ গেলে এ দুর্ভোগ যেন সীমা ছাড়ায়। জানা গেছে, লালমোহন উপজেলায় পল্লী বিদুৎ বেষ্টিত। এখানে অন্য কোনো বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ না থাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে লালমোহনে গত বেশকিছু দিন ধরে চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছে। যার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে রাতের বেলায় মোবাইলের লাইট এবং মোমবাতি জ্বালিয়ে চিকিৎসা দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এই দুর্ভোগ নার্সদের আরো বেশি। কারণ চিকিৎসক কোনো রোগীকে ভর্তি দিলে তারা যান নার্সদের কাছে। এ সময় তারাও মোবাইলের লাইট এবং মোমবাতির আলোতে রোগীদের আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করলেও তা বিঘ্ন ঘটে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন নার্স এবং মিডওয়াইফ বলেন, আমরা বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে চাকরি করছি। চাকরির প্রথম থেকেই দেখছি বিদ্যুৎ যাওয়ার পর অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে। যার জন্য কখনো মোবাইলের টর্চ, আবার কখনো মোমবাতির আলোতে রোগীদের ক্যানুলা পরানোসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রস্তুত করি। এমনকি বিদ্যুৎ যাওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা প্রসূতি মায়েদের মোবাইলের টর্চ বা মোমবাতির আলোতে নবজাতক প্রসব করাতে হয়। এমন দুর্ভোগের কথা এখানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বারবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। বছরের পর বছর যায়, তবে এ সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি খুবই গুরুত্বপূর্ণস্থান। তবে এখানে বিদ্যুৎ গেলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। দিনের বেলায় বিদ্যুৎ গেলে সহ্য করতে হয় অসহনীয় গরম। আর রাতের বেলায় বিদ্যুৎ গেলে গরমের যন্ত্রণার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায়ও মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। তখন হয় মোবাইলের আলো আর না হয় মোমবাতির আলোতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে, রোগীদের সেবায় আমাদের এতো দুর্ভোগের পরেও সেটি চালু করা হচ্ছে না। এ ছাড়া আইপিএস থাকলেও সেটি পুরনো হয়ে যাওয়ায় কয়েকদিন পরপর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ যাওয়ার পর বিকল্প হিসেবে জেনারেটর থাকলেও সরকারিভাবে তেলের কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দের জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। যার জন্যই জেনারেটরটি চালানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া আইপিএসটি কয়েকদিন আগেও ঠিক করা হয়েছে। এখন যেহেতু আবারো নষ্ট হয়ে গেছ, শিগগিরই তা ঠিক করার উদ্যোগ নেবো।