চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভরা মৌসুমেও ইলিশের চড়া দাম। সাগরে চাহিদামত ইলিশ না পাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে হাট-বাজারে।
এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৪০০ টাকায়, যা মধ্যবিত্তদেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসেও নিম্ন আয়ের মানুষের পাতে উঠছে না ইলিশ। সীতাকুণ্ড পৌরসভা ও ৯ ইউনিয়নে অবস্থিত বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জেলেরা জানিয়েছে, সাগরে ইলিশ শিকারে ব্যয় হচ্ছে বেশি, অথচ গত মৌসুমের তুলনায় এবার ইলিশ ধরা পড়ছে কম।
ক্রেতারা বলছেন, এখনো ইলিশের দাম কমেনি। এখন বাজারে যে দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের অনেকটা নাগালের বাইরে। এতে সবার পক্ষে ইলিশ কেনা প্রায় সম্ভব।
স্থানীয়দের আশা, সামনের দিনগুলোতে ইলিশ আরো বেশি করে ধরা পড়বে, তখন দামও অনেকটা কমে আসবে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সাগরে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে না, এ কারণে বাজারে দামও বেশি। মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের মতে, সামনের অমাবস্যা-পূর্ণিমায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৪০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১১০০ টাকা। বাজারে অন্য মাছের তুলনায় ইলিশ খুব কম চোখে পড়েছে।
মুরাদপুর জেলেপাড়ার বাবলু জলদাশ বলেন, সাগরে ইলিশ আশানুরূপ ধরা পড়ছে না। অন্যান্য বছর এ সময়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তো। এবার মাছ ধরতে যারা সাগরে যাচ্ছেন তাদের খরচও ওঠে আসছে না।
তিনি আরো বলেন, আশা করছি সামনের অমাবস্যা-পূর্ণিমায় ভালো পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে। তবে অক্টোবরে প্রতিবছর ২২ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে সরকার। এবারও এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।
৪নং মুরাদপুর ইউনিয়ন ঢালীপাড়ার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, বাজারে অন্য মাছের তুলনায় ভরা মৌসুমেও ইলিশ কম। তাতে দামও অনেকটা বেশি। আমার মতো অনেকে শুধু মাছ দেখছেন, কেনার মতো সাহস হয়ে উঠছে না। এত চড়া দামে অনেকের পক্ষে ইলিশ কেনা সম্ভব নয়। একই সুরে কথা বলেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার আমিরাবাদের বাসিন্দা দলিল লেখক রাজীব উদ্দিন।
সীতাকুণ্ড উত্তর বাজার মাছের আড়ৎদার আমিরাবাদের বাসিন্দা জাবেদ আলী বলেন, সাগরে গিয়ে আগের মতো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় বাজারের চাহিদানুযায়ী চট্টগ্রামের ফিসারিঘাট, কুমিরাসহ বিভিন্ন স্পট থেকে ইলিশ কিনে আনি। পাইকারীভাবে আমাদেরও বেশি দামে ইলিশ কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এখনো পুরোদমে ইলিশ বাজারে আসেনি। তাই হয়তো দাম একটু বেশি। আশা করছি, আগামী জোঁতে জেলেদের জালে চাহিদা মতো ইলিশ ধরা পড়বে, তখন দামও ক্রেতাদের নাগালে আসবে।
তিনি আরো বলেন, সীতাকুণ্ডে কুমিরা পয়েন্টে এখন আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না। কারণ ইলিশ হয়তো বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করেছে। একবার বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করলে সে স্থানে আর ফিরে আসে না ইলিশ।