ঢাকা ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বস্তায় আদা চাষ

জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বস্তায় আদা চাষ

বাড়ির উঠোনে অনাবাদী জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন সাইফুল ইসলাম নামের এক কৃষক। বাড়ির সামনে অনাবাদী উঠোনের ৩ শতাংশ জমিতে বস্তায় আদা চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল সিম চাষ করে স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জ দীঘিরপাড় গ্রামের সাইফুল ও তার পরিবার।

কৃষি জমিতে আদা চাষ করে কয়েকবার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পর আদা চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন কৃষক সাইফুল। পরে উপজেলা কৃষি অফিসার ধীবা রানী রায়ের দিকনির্দেশনায় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আশরাফুল ইসলামের পরামর্শে বাড়ির উঠোনের অনাবাদী জায়গায় পরীক্ষামূলক ৩ শতাংশ জমিতে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন তিনি।

নতুন পদ্ধতিতে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করণের মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক সাইফুলকে সহযোগিতা করে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। প্রায় ৫০০টি বস্তায় ২৫ কেজি আদার চারা রোপণ করেন। বস্তায় মাটি ভরানোর সময় মাটির সাথে জৈব ও রাসায়নিক সার মিশ্রণ করে আদার বীজ বপন করেন।

বস্তায় আদা চাষে রোপণ, নিরানিসহ পানি নিষ্কাশন খরচ অনেক কম হয় বলে জানান কৃষক সাইফুল। সরেজমিনে কৃষক সাইফুলের বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি দেখতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির সামনে উঠোনের এক পাশে অ ৩ শতাংশ জায়গায় প্রায় ৫০০ বস্তায় সারিবদ্ধভাবে আদা চাষ করেছেন কৃষক সাইফুল।

তিনি প্রতি বস্তায় ১ থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন। আদার ক্ষেতে ছায়ার জন্য তিনি আদার পাশাপাশি সাথী ফসল সীম চাষ করেছেন একই স্থানে। আশানুরূপ ফলন হলে আগামী সময়ে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে এই পদ্ধতিতে আদা চাষের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন কৃষক সাইফুল।

একই পদ্ধতিতে বাড়ির সামনের সুপারি বাগানে পরীক্ষামূলক ৫০০টি বস্তায় আদা চাষ করেছেন একই এলাকার শ্যামগঞ্জ বস্তিপাড়া গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক সফিকুল ইসলাম। বাড়ির সামনের সুপারি বাগানটি অনাবাদী অবস্থায় পড়ে ছিল কয়েক বছর ধরে। সুপারি গাছের ছায়ায় কোনো ধরনের ফসলই চাষ না হওয়ার কারণে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল দীর্ঘদিন।

উপজেলা কৃষি অফিসারের দিকনির্দেশনায় উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের পরামর্শে পরীক্ষামূলক আদা চাষ শুরু করেন কৃষক সফিকুল। অতি অল্প খরচে বর্তমানে আদার গাছের স্বাস্থ্য দেখে সন্তুষ্ট আদা চাষি সফিকুল ও তার পরিবার। প্রতি বস্তায় কমপক্ষে ২ কেজি করে আদা উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী কৃষক সফিকুল।

এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর, কুর্শা, ইকরচালী ও হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের আরো কয়েকটি গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের পরিত্যক্ত জমিতে।

উপজেলা কৃষি অফিসারের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা পরিত্যক্ত, পতিত ও অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে উপজেলাজুড়ে। এতে পরামর্শ ও নিয়মিত তদারকি করছেন বিভিন্ন ব্লকে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি অফিসারেরা। এবছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরনের মাধ্যমে প্রায় ১৮ হাজারেরও বেশি বস্তায় আদা চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। উপজেলা কৃষি অফিসার ধীবা রানী রায় বলেন, তারাগঞ্জ উপজেলা এক সময় সারা বাংলাদেশের মধ্যে আদা চাষে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। কিন্তু মাঝখানে কিছু সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে এ উপজেলায় আদা চাষের পরিমাণ অনেকখানি কমে গেছে। আমরা সমস্যাগুলোর সমাধান করে আবারো তারাগঞ্জ উপজেলাকে আদা চাষে শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালাচ্ছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত