ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হাসানের পরিবার ভালো নেই

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হাসানের পরিবার ভালো নেই

গত ১৮ জুলাই বাসায় ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে আহত হন হাসান সিকদার। চোখে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গত ১৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হাসান চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের তুলাতলি গ্রামের সিকদার বাড়ির কবির হোসেনের ছেলে। তিনি দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে দারিদ্য ঘোচাবেন। সেই স্বপ্ন পূরণে পড়ালেখা ও সংসারের খরচ জোগাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় একটি লাইব্রেরিতে কাজ নেন তিনি গত মঙ্গলবার হাসানের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, হাসানের বাবা কবির হোসেন একজন শ্রমিক। তবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন কর্মক্ষম। হাসানের মা হালিমা বেগম গৃহিণী। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। এক বোন কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এবং আরেক বোন স্থানীয় একটি মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

হাসানের সম্পর্কে চাচা মোশারফ সিকদার বলেন, এই পরিবারটি খুবই নিরীহ এবং দরিদ্র। তবে হাসান ছোট বেলা থেকে মেধাবী হওয়ায় তার প্রতি আমাদের আদর-স্নেহ ছিল। তার পড়ালেখা যেন বন্ধ না হয়ে যায় সে কারণে সবার সহযোগিতায় তার পড়ার খরচের ব্যবস্থা হয়। এরই মধ্যে তার বাবা কবির হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। হাসানদের বসতঘর ছিল খুবই ছোট। লোকজনের সহযোগিতায় একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তার বড় বোনকেও সবাই মিলে সহযোগিতার মাধ্যমে বিয়ে দিতে হয়।

হাসানের বোন লিমা বলেন, ভাইয়ার সঙ্গে আমার সবচাইতে বেশি কথা হত। ঢাকায় যাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় ইমোতে ফোন দিত। সর্বশেষ ১৭ জুলাই তারিখে আমার সঙ্গে কথা হয়। ওই দিন বিকেলে ফোন দেয়। রাতে মায়ের সঙ্গেও কথা হয়। পরের দিন ১৮ জুলাই সকালে আমি মোবাইলে ম্যাসেজ দেই। কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। ওইদিনই বেলা ১১টার দিকে ভাই লাইব্রেরি থেকে বের হলে গুলিবিদ্ধ হয়। দুপুরে আড়াইটার দিকে আমরা খবর পাই। এরপর মা-বাবা সবাই ঢাকায় চলে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে ভাইকে আহত অবস্থায় দেখতে পাই।

হাসানের মা হালিমা বেগম বলেন, ছেলে আমার মেধাবী ছিল। সংসারের হাল ধরার জন্য এ বছর পরীক্ষা না দিয়ে লাইব্রেরিতে কাজ নেন। ঢাকায় থাকলেও আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ১৭ জুলাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমরা প্রতিবেবি একজনের মাধ্যমে খবর পাই।

তিনি জানান ঢাকা মেডিকেলে আসে হাসান। এরপর ঢাকায় রওয়ানা হই। আন্দোলনের কারণে কাঁচপুর ব্রিজের পরে আর যেতে পারিনি। তার বাবাসহ পায়ে হেঁটে হাসপাতালে যেতে হয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলে আইসিইউতে। চিকিৎসকরা বলছিলেন ৭২ ঘণ্টা দেখবে। প্রথমে তার মাথায় অপারেশন এবং পরে চোখে অপারেশন করবে। কিন্তু তার আগেই ১৮ জুলাই রাত পৌনে ১০টার দিকে ছেলের মৃত্যু হয়। পরে বাড়িতে এনে তার দাফন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে তার অনেক স্বপ্নের কথা আমাদের বলেছে। প্রায় সময় বলত মা আমি বিদেশে যাব। তখন টাকা রোজগার হলে তোমাদের আর কষ্ট থাকবে না। বোনদের বিয়ে দিতে পারবো। বড় বোনকে সহযোগিতা করব। বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। আমাদের ঘর তৈরি হবে। সেসব স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য সরকারি যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেসব নির্দেশনা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত