ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামের স্বামীহারা আনোয়ারা খাতুন এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন একটি ঘরে। পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে নেতাই নদীতে ভেসে গেছে একমাত্র অবলম্বন ঘরটি।
তিনি জানান, রাতে হঠাৎ করে ঢলের পানি এসে প্রবলবেগে ঘরে প্রবেশ করে। পড়নের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নিতে পারিনি। এক সপ্তাহ ধরে অন্যের বাড়িতে আছি। শুকনো খাবার খেয়ে কোনমতে বেঁচে আছি।
একই গ্রামের মাহতাব উদ্দিন, রব্বানী, জামাল উদ্দিনদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ ও একটি গাছের বাগান। প্রতিবছর বন্যার পানিতে নেতাইয়ের বুকে চলে যায় ফসলের জমি। এভাবে তাদের দুই আড়া জমি গিলে খেয়েছে নেতাই নদী।
হনুফা আক্তার জানান, জীবনে এমন বন্যা দেখিনাই, পানি যখন আসতে শুরু করছে তখন কোনোমতে দৌড়ে গিয়ে জীবন বাঁচিয়েছি। ভয়াবহ এই বন্যায় উপজেলার নেতাই পাড়ের এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙ্গার পাশাপাশি ফসলের মাঠ এখন ধুধু বালুচরে পরিণত হয়েছে।
মোতালেব এবং ময়না আক্তার জানান, বন্যার পানির সঙ্গে তাদের জমিতে বালু এসে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।এই বালু সরিয়ে ধান ফলানো যায় কিনা তা অনিশ্চিত। পাহাড়ি ঢলে নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নেতাই পাড়ের মানুষজন নিঃস্ব হয়ে গেছে।
দক্ষিণমাইজপাড়া, গামারীতলা এবং ঘোঁষগাও ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। তারা এখন নিঃস্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন মাঝে মাঝে এসে নামমাত্র বাঁধ নির্মাণ করেন, পানির এক ধাক্কায় তা ভেঙে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, বন্যার পানিতে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙেছে এ বিষয়ে অবগত আছি, কয়েকজন এসে আমার কাছে আবেদনও করেছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি, সরকারিভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে। ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে পরিদর্শন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।