দুই মাস ধরে পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৬৮টি গ্রামের ২৭ বিলের পানি বিল খুকশিয়ার ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেট দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়। হরি নদী ও খুকশিয়ার খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেট পলিতে ভরাটের কারণে ২৭ বিল এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকার ধারণ করেছে। ভবদহ এলাকার দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ প্রায় দুই মাস ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে।

পানিবন্দি এলাকার জনগণ ৩ যুগ ধরে এভাবেই পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদ করে আসছে। ৮ অক্টোবর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটি ৫ দফা দাবিতে পানিসম্পদ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এ ছাড়া, গত ৯ অক্টোবর সুফলাকাটি ইউপি চত্বরে বানভাসীদের বিশাল সমাবেশ হয়েছে।

সমাবেশে চেয়ারম্যান এসএম মুনজুর রহমানকে আহবায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পানি সেচ প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাথরা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭/৮ দিন ধরে বুড়ুলি ও পাঁজিয়া-পাথরা বিল এলাকার ৪৭ গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৪/২৫টি সেচ পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন চলছে। এ পর্যন্ত ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। অধিকাংশ বাড়িঘর থেকে পানি নামা শুরু হওয়ায় বানভাসিরা সুফল পেতে শুরু করেছে। তাদের দেখে বিল গরালিয়ার প্লাবিত ২৭ গ্রামের পানি নিষ্কাশনে ৪টি সেচযন্ত্র দিয়ে এবং ২৭ বিল সেচ কমিটি খুকশিয়া খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেটের পলি ২/৩ দিন ধরে অপসারণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বিল খুকশিয়া পানি সেচ প্রকল্প কমিটির আহ্বায়ক ও সুফলাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মুনজুর রহমান বলেন, হরি নদী ও খুকশিয়া খালের ৮ ব্যন্ড স্লুইচ গেট থেকে হরি নদী পর্যন্ত ২২০ ফুট খাল পলি পড়ে ৫ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড হরি নদীর বিল খুকশিয়া থেকে ডুমুরিয়ার শোলগাথিয়া ব্রিজ পর্যন্ত ১ কিলোমিটার পলি অপসারণ কাজ করছে। কিন্তু বিলের পানি থেকে নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় এতে পানি নিষ্কাশন হবে না।

যেকারণে বানভাসীরা বৈদ্যুতিক সেচ মোটর দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়ে আসছিল। খালের পলি অপসারণ করতে ৮ ইঞ্চি সাইজের ৮টি বৈদ্যুতিক সেচ মোটর দিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ মাসব্যাপী ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চালানো হবে।

গতকাল রোববার কেশবপুর পৌরসভার আলতাপোল, মধ্যকুল, হাবাসপোল, বালিয়াডাঙ্গা, বাজিতপুরসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এবং উপজেলার ব্যাসডাঙ্গা, সুজাপুর, আলতাপোল ২৩ মাইল, মাগুরাডাঙ্গা, বুড়ো বাঁকাবর্শীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জনবসতি এলাকা হরিহর নদ ও বিভিন্ন খালের উপচে পড়া পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে এ সব এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি।

কারো ঘরের মধ্যে পানি আবার কারো বাড়ির চতুর্দিকে পানি থৈ থৈ করছে। শুধু তাই নয় তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের মানুষদের উপার্জনের উৎস বিভিন্ন ফসলি জমি এবং মাছের ঘের। ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বন্যাকবলিত এসব এলাকার মানুষেরা।

কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, কেশবপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরিহর, বুড়িভদ্রা, আপারভদ্রা ও হরি নদীর ভরাটকৃত পলি স্কাভেটর দিয়ে অপসারণ কাজ চলছে। কাজ সম্পন্ন হলে দ্রুত পানি সমস্যার সমাধান হবে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, কেশবপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য হরিহর, বুড়িভদ্রা নদী এবং আপার ভদ্রা নদীতে পুনরায় খনন কাজ চলছে। এ সব নদীতে খনন কাজের ফলে নিকটবর্তী খাল দিয়ে আস্তে আস্তে ওপরের পানি নেমে আসছে। এ ব্যাপারে আমাদের কার্যক্রম চলমান।

কেশবপুরে ১০৪ গ্রাম প্রায় ২ মাস ধরে প্লাবিত। ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩৬৪০টি মাাছের ঘের, ২৪২০টি পুকুর পানিতে তলিয়ে ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১৮৩০ হেক্টর আমন, ২৩৯ হেক্টর সবজি, পান, তুলা, মরিচ ও ৬০ হেক্টর তরমুজ পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।