তিতাসে লাগামহীন সবজির বাজার

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার তিতাসে উপজেলা সদর বাজারসহ অন্যান্য হাটবাজারে অসহনীয় পর্যায়ে উঠেছে সবজির দাম। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য তালিকা কাটছাট করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গতকাল রোববার কড়িকান্দি ও বাতাকান্দি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভালো মানের কাঁচা মরিচ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কালচে রংয়ের কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা থেকে ২২০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, বিলাতি ধনে পাতা ২৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি ধনে পাতা ৩৪০ থেকে ৪৭০ টাকা, শিম ২৪০ থেকে ৩২০ টাকা, কালো বেগুন ৬০ টাকা থেকে ৯০ টাকা, মুলা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৭০ থেকে ১০০ টাকা, কাকড়ল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ থেকে ১০০ টাকা, জলপাই ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বেড়েছে। বিশেষ করে লাল শাক, মুলা শাক, কলমি শাক, পালং শাক, ডাটা শাক আটি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

কড়িকান্দি ও বাতাকান্দি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আমরা ঢাকার কারওয়ান বাজার ও কুমিল্লার নিমসায় থেকে সবজি এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। গত এক সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে সব সবজির দাম বেড়েছে। আমরা আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে হয়, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে এসব ব্যবসায়ীদের ধারণা পূজা শেষ হলে এসব সবজির দাম কিছুটা কমতে পারে। উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে ঝালমুড়ি বিক্রেতা রাজাপুর গ্রামের মজিবুর রহমান জানান, আগে আমি রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতাম, পায়ের সমস্যার কারণে এখন ঝালমুড়ি বিক্রি করি। ৫০০ টাকার বেশি প্রতিদিন আয় হয় না, আধা কেজি করে দুই ধরনের সবজি কিনলে দেড়শ থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। কড়িকান্দি বাজারে সবজি কিনতে আসা একলারামপুর গ্রামের গৃহিনী মর্জিনা বেগম বলেন, আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ গরিব। এভাবে সবজির দাম বাড়লে কি করে সংসার চলবে? তাই সবজির তালিকা ছোট করতে হচেছ। আগে দুই-তিনটি তরকারি রান্না করলেও এখন শাক আর একটি তরকারি দিয়ে খাবারের চাহিদা মিটাচ্ছি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং না করার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীরা। প্রশাসন মনিটরিং কার্যক্রম গতিশীল করলে কিছুটা হলেও মানুষ সুফল পাবে। উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রামের দিনমজুর মহিবুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ গরিব। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ কৃষিকাজ ও ভ্যান-অটোরিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়। একজন দিনমজুর ও একজন ভ্যানচালক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করে। আর বৃষ্টি-বাদল থাকলে ঘরে বসে থেকে দেনা করে সংসার চালাতে হয়।

এমন অবস্থায় বাজারে যদি অস্বাভাবিকভাবে চাল-ডাল, তেল ও সবজির দাম বাড়তে থাকে, তাহলে আমরা কিভাবে বাঁচব। তিতাস উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া মমিন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে আমরা বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালাবো।