পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অতি বৃষ্টিপাতের কারণে সাঁথিয়া পৌরসভার বেশ কিছু মহল্লায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পৌর এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে প্রবেশ করেছে বৃষ্টির পানি। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ পাড়া-মহল্লার-রাস্তাঘাট। পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। জানাগেছে, বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গত ৪ অক্টোবার মধ্যরাত থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হলে আরো ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় পৌরসভার অধিকাংশ বাসিন্দাদের। হঠাৎ করে বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় মালামাল ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকে দুই মাস ধরে বাড়িতে রান্না করে খেতে পারে না। কেউ কেউ বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র বাসা নিয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, সাঁথিয়া পৌর শহরের ৪,৫ ও ৬নংওয়ার্ডের কলেজ পাড়া, মহিমগাছা, ফকিরপাড়া, পিপুলিয়া, ব্যবসায়ী পাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে পানি-কাদার মধ্যে যাতায়াত করতে গিয়ে পায়ে ঘা হয়ে গেছে ভুক্তভোগীদের। অনেকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বাড়ি থেকে ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজে, বাজারে বের হতে হচ্ছে। অনেকসময় কোমলমতি শিশুরা সাকো থেকে পড়ে আহত হয়েছে। অন্যদিকে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির মধ্যে দিয়ে চলাফেরার কারণে অনেকের চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। অনেক তাঁতী তাদের তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন। কলেজ পাড়াতে গিয়ে দেখা যায় মনিরুলের বাড়ির সামনে সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ। মুক্তার হোসেন নামে এক বাসিন্দাকে বাড়ির সামনে সাঁকো মেরামত করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, দেখেন এটা আমাদের ১ম শ্রেণির পৌরসভা। এ জন্য সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছি। আর প্রতিবছরই এটা মেরামত করি। বোয়াইমারী বাজারের ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, পানি নিস্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতায় আমরা চরম দুর্বিসহ জীবন যাপন করছি। আমাদের বাচ্চাদের পায়ে ঘা হয়ে গেছে। এ যেন দেখার কেউ নাই।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ৮ অক্টোবর সাঁথিয়া পৌরসভা স্থাপিত হয়। ২০১২ সালে সাঁথিয়া পৌরসভা ‘গ’ থেকে ‘খ’ এবং ২০১৫ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নতি লাভ করে। তারপরও দীর্ঘ প্রায় ৯ বছরেও দুর্ভোগ কমেনি পৌরবাসীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার মোট ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরসভার ৪ ওয়ার্ড কলেজ পাড়া, ৬নং ওয়ার্ড পিপুলিয়া, ফকির পাড়া, ব্যবসায়ীক পাড়ার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দামুকুল, মুক্তার, মনিরুল, সেলিম হোসেন, আলামিন মুন্সিা, মিজান ও সোহাগ মুন্সি, জানান, পৌর এলাকার দক্ষিণ বোয়াইলমারী মহল্লার পিপুলিয়া তিনমাথা মোড় আনছারীয়া জামে মসজিদের সমানে পুরাতন ড্রেনের সঙ্গে নতুন ড্রেনের সংযোগ করে দিলে পানি দ্রুত বের হয়ে যেত। সাঁথিয়া পৌরসভার পিপুলিয়া মহল্লার পানিবন্দি মেহেরুন্নেছা বলেন, ঘরের ভেতর পানি থাকায় সময়মত রান্না করতে না পারায় ঠিকমত খাবার খেতে পারছি না। কারিগর পাড়ার তাঁত মালিক আজিম মুন্সী বলেন, তাঁত কারখানায় পানি ঢুকে পড়ায় বৈদ্যুতি শকের ভয়ে তাঁত বন্ধ করে দিয়েছি। সাঁথিয়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ মল্লিক বলেন, জলাবদ্ধতায় পৌরবাসীর ভোগান্তির বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাঁথিয়া পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাতুল হক বলেন, জলাবদ্ধ মহল্লাগুলো পরিদর্শন করে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন এবং মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পৌরসভার প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।