২০০ বছরের ঐতিহ্য জীবনসঙ্গী বাছাই মেলা

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সিদ্দিক হোসেন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)

শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরের দিন প্রচার প্রচারণা ছাড়াই প্রতি বছর ‘বাসিয়া হাটি’ নামে পরিচিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মিলনমেলা বসে। মেলার প্রধান আকর্ষণ সাঁওতালদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়া। ঐতিহ্যগতভাবে বউমেলা নামে পরিচিত এটি। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্য চলে আসছে। সন্ধ্যার আগে তরুণ- তরুণীরা জীবনসঙ্গী খুঁজে বের করে অভিভাবকদের জানান। দিনাজপুরের বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয়া দশমীর পরের দিন গোলাপগঞ্জ হাট হওয়ার কারণে এক দিন পর গত মঙ্গলবার আয়োজন করা হয় এই বউমেলার। বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আয়োজনে এই মেলায় প্রথা অনুযায়ী সাঁওতাল তরুণ-তরুণীরা জীবনসঙ্গী খুঁজতে আসেন এই মেলায়। ১৮ পেরিয়ে ২৫ ছুঁই ছুঁই বয়সের তরুণ-তরুণীরা রঙিন পোশাক পরে বাড়ির বড়দের সঙ্গে মেলায় আসেন।

কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গীর নজর কাড়তে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরে তারা নানাভাবে চেষ্টা করেন! বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের মাঠে আসতে শুরু করে মানুষ। সকাল থেকে ভিড় বাড়তে থাকলেও মূল মেলা শুরু হয় বেলা ৫টার পর, রাত পর্যন্ত থাকে মানুষের আনাগোনা। অনেক দিন ধরে’ এই মেলা চলছে। সাঁওতাল তরুণ-তরুণীরা কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গী পেতে এক বছর অপেক্ষা করে থাকেন। জীবনসঙ্গী খোঁজা মূল উপলক্ষ হলেও মেলায় থাকে নানা পণ্যের পসরা। বাহারি কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের মালা, মাটির তৈরি খেলনা, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত দা, কুড়াল, হাঁড়ি, পাতিল ও নানা পদের খাবারের দোকান। চলতে থাকে বাজনার তালে ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গানের আসর। স্কুলমাঠের একদিকে চলে কনে বাছাই পর্ব। মেলায় সাঁওতাল তরুণীরা এসেছিলেন রঙিন পোশাক পরে। নজর কাড়তে গলায় মাথায় বাহারি ফুলের সাজ। তাদের দৃষ্টি রুমাল বাঁধা হাতের দিকে। বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি কাড়তে হাতে রুমাল বেঁধে মেলায় আসেন তরুণেরা। সন্ধ্যা গড়ানোর আগেই বেঁধে ফেলতে হয় সঙ্গী। নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, আগে কঠিন সামাজিক বিধিবিধান থাকলেও বর্তমানে অনেকেই রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি মেনে বিয়ে করছেন। যুবক- যুবতীরা একে অন্যকে পছন্দ করলে পারিবারিক আলোচনার মধ্যদিয়ে বিয়ের মাধ্যমে তারা দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। এক সময় পাত্রী পছন্দ হলে পাত্র তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে যেতেন নিজের বাড়িতে।