বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৪ তম তিরোধান দিবসে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। দাওয়াত নেই, পত্র নেই, তবুও সব পথ যেন এসে মিশে গেছে মরা কালী নদীর তীরে। কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা ছেঁউড়িয়া। কিন্তু এখন সে রাস্তায় যেতে সময় লাগছে ঘণ্টার ওপরে। সাধু-গুরু বাউলেরা ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড়ই বেশি। একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে উঠেছে লালনভূমি ছেঁউড়িয়া।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাউলের চারণভূমিতে আসা হাজার হাজার লালন-ভক্ত, সাধু-গুরু কর্তৃপক্ষের দেয়া সকালের অধিবাসে পায়েশ ও মুড়ির বাল্যসেবা নেন। দুপুরে তারা মরা কালীগঙ্গায় গোসল সেরে ইলিশ মাছ-ভাত ও ত্রিব্যঞ্জন দিয়ে (তিন ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি তরকারি) দুপুরের খাবার পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। পুণ্যসেবা গ্রহণ কেন্দ্র করে বেলা ১টায় লালন একাডেমির প্রধান ফটক তখন বন্ধ। ভেতরে লাইন দিয়ে কলাপাতা সামনে নিয়ে হাজার হাজার সাধু ফকিরের অপেক্ষা। সবাই খাবার পাবার পর বিশেষ আওয়াজ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হলো বিতরণ শেষ। এবার খাওয়া শুরু হলো একযোগে। ইলিশ মাছ, ভাত ও সবজি দিয়ে প্রায় ৫ হাজার বাউল, সাধু ফকির পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও দই মিষ্টি খাওয়ানো হয়। দাওয়াত ছাড়াই মানুষ ছুটে আসে দলে দলে, হাজারে হাজারে। কোন সে উদাসী ডাকে তা কেউ জানে না।
মূল গেট থেকে ভিতরে ঢুকে অডিটোরিয়ামের নিচে বসে প্রবীণ বাউল নহির শাহ। বয়স প্রায় ৭৯ বছর। শিষ্যদের নিয়ে গানে মজেছিলেন। এখনো আটা স্বাস্থ্য। দেখে বোঝা যায় না বয়স। গান থামালে কথা হয় এ বাউলের সাথে। গান দিয়েই শুরু করেন কথা। ‘খাচার আড়া পড়লো ধসে পাখি আর দাঁড়াবে কিসে’। গানের মর্ম কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন বুঝে নিতে হবে। লালন সাঁইজির মৃত্যুর পর তিরোধান দিবসে প্রতিবছরের মতো এবারো সাধক লালনের আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রাণের টানে ছুটে আসেন। একই সঙ্গে চলছে দীক্ষা পর্ব। নব্য শিষ্যরা গুরুদের সেবা করতে উদগ্রীব। যেন কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে তাদের অটুট লক্ষ্য। যশোর থেকে আসা নব্য বাউল ফকির আসলাম জানান, এ পথে আসা দু’মাস হয়েছে। এখনো কিছুই শিখতে পারিনি। গুরু সাথেই থাকি দিনরাত। তার খেদমত করায় আমার কাছ। গুরু বলেছে সময় হলে গুরু বাক্য দেয়া হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) শারমিন আখতার’র সভাপতিত্বে ৩ দিনব্যাপী বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির তিরোধান দিবসের (মৃত্যুবার্ষিকী) অনুষ্ঠানের উদ্বাবধনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। প্রধান আলোচক লালন মাজারের প্রধান খাদেম। সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে র্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ।