দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা। গত বৃহস্পতিবার সনাতন ধর্মালম্বীদের লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এ মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থী ছিল শুধুই নারী। প্রতিবছর লক্ষ্মীপূজার পরদিন ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ চত্বরে ঐতিহ্যবাহী বউ মেলার আয়োজন করা হয়।
মেলার আগের দিন শহরজুড়ে মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হয় মেলাকে ঘিরে। মেলার দিন সকাল থেকেই শুরু হয় মেলা চত্বরে সাজসজ্জা। বিকাল থেকেই আসতে শুরু করেন মেলার ক্রেতা ও দর্শনার্থী শিশু-কিশোরী-তরুণীসহ সব বয়সী নারীরা। মেলায় কেনাকাটা করতে আসা গৃহবধূ ও কলেজ শিক্ষার্থীরাসহ একাধিক নারী বলেন, লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী এই বউমেলা হয়ে থাকে। মেলায় শুধু নারীরাই ক্রেতা হওয়ায় নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করা যায়। তবে মেলায় আসলে খুব আনন্দ লাগে।
অনেক পরিচিত নারী ও আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়। বউ মেলার বাইরে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক পুরুষ বলেন, মেলাতে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ থাকে জানার পরও শুধু নিজেদের বউ, বাচ্চাদের আনন্দের জন্য তাদের নিয়ে মেলায় আসতে হয়। বউ বাচ্চারা মেলার ভেতরে ঘোরাঘুরিসহ কেনাকাটা করছে। তাদের কাজ শেষ হলেই তাদেরকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। তাই তাদের জন্য অপেক্ষা মেলার বাইরে।
মেলার আয়োজক সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশেষ রঞ্জন দাস ও সাধারণ সম্পাদক গৌ চন্দ্র সরকার বলেন, লহ্মীপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর পূজার পরদিন বউমেলার আয়োজন করা হয়। মেলাটি তৎকালীন জমিদার বিমল বাবু শুরু করেন। জমিদার স্বপরিবারে ভারতে চলে গেলেও ঐতিহ্যবাহী বউ মেলাটি সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে প্রতি বছর হয়ে আসছে। মেলাটি শুধু নারীদের জন্যই। তাই মেলায় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ থাকে। বাড়ির বউয়েরা সবচেয়ে বেশি এই মেলায় আসেন বলে এই মেলার নাম বউ মেলা। মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। ফুলবাড়ী থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী বউ মেলাটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বউমেলায় সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হয়েছে। সেখানে কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন।