শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে নওগাঁর রানীনগরের কুজাইল গ্রামে তিন দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা শুরু হয়েছে। মেলার ঐতিহ্য মেয়ে-জামাইরা মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যায়। এছাড়াও রয়েছে ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর। হাজারো দর্শক নদীর দুইপাড়ে নৌবহর উপভোগ করে। তিন দিনে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বেচাকেনার আশা। এ মেলার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় থাকবে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
লক্ষ্মী সম্পদ আর সৌন্দর্যের দেবী বলে মনে করেন সনাতন ধর্মম্বলী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে লক্ষ্মী পুজা উপলক্ষে উপজেলার কুজাইল গ্রামে ছোট যমুনা নদীর তীরে মেলার আয়োজন করে স্থানীয়রা। পূজা শেষে ছোট যমুনা নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়। এদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে শত শত নৌকা নিয়ে নৌবহর করে লক্ষ্মীপূজা অনুসারীরা। জেলার আত্রাই, মহাদেবপুর, নওগাঁ সদর ও রানীনগরসহ কয়েকটি উপজেলার লক্ষ্মীর পূজা অনুসারীরা নৌকায় চড়ে আসতে থাকে। নৌকায় সাউন্ড বক্স, মাইক আর ঢাকের তালে নৃত্যে মুখরিত হয়ে উঠে ছোট যমুনা নদী। মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি বাড়ি আত্মীয় স্বজনদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে। ধুম পড়ে যায় নানা মিষ্টি, মিঠাই ও পিঠা তৈরিতে। মেলা থেকে বড় বড় রুই, কাতলা, সিলভার ও পাঙ্গাস মাছ মেয়ে-জামাই তাদের শ্বশুর বাড়িতে কিনে নিয়ে যান। মেলার দ্বিতীয় দিন ‘বউ মেলা’। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন বয়সী শত শত নারীরা বউ মেলায় আসেন। এছাড়া গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, খেলনা ও আসবাব পত্রের দোকান বসেছেন। বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, চরকি, নৌকা, ড্রাগন ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইড। প্রায় দুইশটি দোকান অংশ নেয়। মেলা শেষ হলেও আরো সপ্তাহব্যাপী চলে কাঠের আসবাবপত্রের দোকান। মেলায় ঘুরতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন- ছোট যমুনা নদীতে শত শত নৌকা নিয়ে নৌবহর দেখলাম। তারা নেচে-গেয়ে আনন্দ করছে। সুস্থ ধারার একটি বিনোদন বলা চলে। পরিবার নিয়ে আমরা আনন্দ উপভোগ করলাম। মেলায় মাছ ব্যবসায়ি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ মেলার আকর্ষণ জামাই মেলা। মেলা থেকে জামাইরা মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যায়। আমি ৪-৮ কেজি ওজনের কাতলা, রুই ও সিলভার নিয়ে আসি বিক্রির জন্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। কাশিমপুর ইউনিয়ন পষিদের চেয়াম্যান মকলেছুর রহমান বাবু বলেন- শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতি বছর এ মেলা হয়ে আসছে। তবে মেলা উপলক্ষে পূর্ব থেকে কোন প্রকার প্রচার প্রচারনার দরকার হয়না। মেলায় তিনদিনে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেচাকেনা আশা। কুজাইল বাজার জাগরণ সংসদ ক্লাব ও মেলা কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, শত শত বছর আগে থেকে লক্ষ্মীপুজা উপলক্ষে এখানে মেলা হয়ে আসছে। এই মেলার মূল আকর্ষন নৌবহর। যা নদীর উভয় পাশে হাজারো নারী পুরুষ উপভোগ করে। এরপর মেলায় জামাইদের বড় বড় মাছ, মিষ্টিসহ হরেক রকমের খাবার কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। এছাড়া বউমেলা হয়ে থাকে। আমরা হিন্দু মুসলিম উভয়ে মিলেমিশে এই আনন্দ উপভোগ করি। আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে।