দশ বছরে পাবনায় আবাদি জমি কমেছে ৬ হাজার হেক্টর
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কাজী বাবলা, পাবনা
পাবনার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাবনায় ১০ বছর আগে আবাদি জমি ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮৬২ হেক্টরে। গত এক দশকে জেলায় ছয় হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি কমে গেছে। একই সময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন লাখ। এসময়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় প্রায় সোয়া লাখ টন। ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন আরও হ্রাস পেলে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা জানান- বিদ্যমান জমির মধ্যে ৪৪ শতাংশ জমিতে ধান, ১০ শতাংশ গম, পেঁয়াজসহ মসলা জাতীয় ফসল ১১ শতাংশ, পাট ৯ শতাংশ, তেল জাতীয় ফসল ৯ শতাংশ, ডাল জাতীয় ফসল এক শতাংশ, শাক-সবজি চার শতাংশ, ফল দুই শতাংশ এবং তিন শতাংশ জমিতে অন্যান্য ফসল আবাদ হয়ে থাকে।
জেলায় খাদ্য চাহিদা ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৯ টন। সেখানে উৎপাদন হয়ে থাকে ৬ লাখ ৯০০ টন। এরমধ্যে পচে নষ্ট হওয়া, বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা, গুদামে নষ্ট হওয়া ও ইঁদুরে খাওয়াসহ নানা কারণে কিছু পরিমাণ খাদ্য বাদ যায়। বীজ ও নষ্ট বাদে থাকে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৮৭ টন খাদ্যশস্য। এরপরও উদ্বৃত্ত থাকে ৬৮ হাজার ৪৭৮ টন। তবে ১০ বছর আগে বার্ষিক খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকতো এক লাখ ৯২ হাজার ১৩৮ টন। সে হিসেবে গত ১০ বছরের ব্যবধানে পাবনা জেলায় বার্ষিক খাদ্য উদ্বৃত্ত কমেছে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ টন। তারা আরো জানান, প্রতিবছরই বেশকিছু পরিমাণ আবাদি জমি ঘরবাড়ি নির্মাণ, ইটভাটা, রাস্তা-ঘাট, নদীভাঙনসহ নানা কারণে অনাবাদির তালিকায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি থেমে থাকছে না। এতে বিদ্যমান জমিতে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। যদিও পাবনা খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে স্থান লাভ করেছে। কিন্তু আবাদি জমি নষ্ট করার প্রবণতা না কমলে এই সাফল্য কতদিন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ফসলি জমি কমে আসার এ হার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করেন তারা। পাবনা জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জেলায় জনসংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ জন। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে জনসংখ্যা ২৯ লাখ ৯ হাজার ৬২৪ জন। অর্থাৎ গত ১০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে তিন লাখের বেশি। এছাড়া ১০ বছর আগে পরিবার ছিল পাঁচ লাখ ৯০ হাজার ৭৪৯টি। এখন পরিবারের সংখ্যা সাত লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৮টি। পরিবার বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ। ফলে তাদের জন্য ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে বাড়িঘর। এতে ফসলি জমির পরিমাণ আরও কমেছে। এর পাশাপাশি নদীভাঙন, ইটভাটা, ক্যানাল, সড়ক ও রেলপথের জন্যও ফসলি জমি ক্রমশ কমে যাচ্ছে। পাবনা কৃষি গবেষণা বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতিবছর চাষযোগ্য জমি কমছে ১ শতাংশ হারে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদা পূরণে চার ফসলভিত্তিক ফসল বিন্যাস ধারা উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। জেলার আটঘরিয়া উপজেলায় এ কার্যক্রম চালু করে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জালাল উদ্দিন জানান, কৃষি যন্ত্রপাতি, মানসম্পন্ন বীজ ও উন্নতজাত ব্যবহার, সেচণ্ডসারসহ সব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জেলায় শস্য নিবিড়তা ২২৫-২৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
ফলে আবাদি জমির পরিমাণ কমলেও নানা জাতের ফসলের আবাদ বাড়ছে। চাষিরা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে সক্রিয় হয়ে ওঠায় ফসলি জমি কমলেও আনুপাতিক হারে ফসল উৎপাদন বাড়ছে বলে তিনি দাবি করেন।