ছড়া ও টিলা থেকে বালু উত্তোলন, হুমকিতে পরিবেশ
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের পানছড়ি পাহাড়ি এলাকার টিলা ও ছড়া থেকে অবাধে চলছে সিলিকা বালু উত্তোলন। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ট্রাক্টর দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু তোলার ফলে বেহাল হয়েছে ওই এলাকার রাস্তাঘাট।
শুধু তাই নয়, বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে পানছড়ি আশ্রয়ণ এলাকাসহআশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ। পানছড়ি জেলার চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের রঘুনন্দন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। জানা গেছে, পানছড়ি মৌজার ৮নং বস্তি এলাকার গাঁধাছড়ায় ও খাসবাড়ি টিলায় বিকট শব্দেচলছে অর্ধডজন ড্রেজান মেশিন। প্রায় বিশ একর জায়গা জুড়ে চলছে ড্রেজার মেশিনের এই তাণ্ডবলীলা। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে পুরো এলাকা। ভাঙন দেখা দিয়েছে পার্শ্ববর্তী একাধিক টিলায়।
এতে করে আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন অতিবাহিত করছেন। বালু উত্তোলনের পরে একের পর এক ট্রাক্টর বোঝাই করে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ গাড়ি বালু বিক্রিকরে প্রায় দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বালুখেকোরা। তারা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। অবাধে বালু উত্তোলন করায় পানছড়ি পাহাড়ে কাঁপছে টিলা।
একইভাবে লালচান্দ বাগান এলাকার ছড়া ও টিলা থেকে ড্রেজারে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। আর এতে করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বালুখেকো ওই চক্রটি। বালুদস্যুরা খুবই প্রভাবশালী। তাদের প্রভাবের কাছে এখানকার সবাই দুর্বল। নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয়রা বলেন, ২০০০ সালে প্রায় ৫০ একর জমিতে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি ৫০০ পরিবার নিয়ে যাত্রা করে। টিলায় টিলায়তাদের বসবাস। এরপর থেকে তারা জ্বালানি কাঠ (লাকড়ি) বিক্রি, সবজি চাষ, গাড়ি চালকসহবিভিন্ন পেশায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাছাড়া এ পাহাড়ে আরও পরিবার বসবাস করছে বলে জানান তারা। তারা জানান, বালুখেকো চক্রের সদস্যরা এখানকার পাহাড়ি এলাকায় ড্রেজার মেশিন স্থাপন কওে রেখেছে। এগুলো দিয়ে প্রতিদিন টিলা ও টিলার আশপাশের ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এভাবে বালু উত্তোলন করায় অনেক স্থানে টিলা ও ছড়া এখন পুকুর হয়ে গেছে। আরও বহু টিলা ও ছড়া রয়েছে হুমকিতে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, চুনারুঘাটসহ কয়েকটি উপজেলায় পাহাড়-টিলা কেটে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চলছে বহু বছর ধরে। এতে সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ ও প্রকৃতির ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সেটাঅপূরণীয় ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, উচ্চ আদালত কর্তৃক পাহাড়-টিলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এগুলো রক্ষায় কার্যকর কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যার ফলে পাহাড় ও টিলা কাটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি। দায়ীদের চিহ্নিত করে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাসহ পাহাড়-টিলাকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, অবৈধবালু তোলা বন্ধে প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। হবেও না। পানছড়িতে কারা বালু উত্তোলন করছে আমাকে জানান। আমি কঠোর পদক্ষেপ নেব।