সাতক্ষীরায় ভূগর্ভের পানিতে সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশ আর্সেনিক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ব্যাপক আকার ধারণ করেছে আর্সেনিক দূষণ। এ অঞ্চলের ভূগর্ভের পানিতে অতিমাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে একটি উপজেলায় সহনশীল মাত্রায় রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পানিতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ আর্সেনিক মানবদেহের জন্য সহনশীল। সেখানে জেলার টিউবওয়েল বা ভূগর্ভের পানিতে সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশ পর্যন্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা মানবদেহের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ। তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়া তথ্যানুযায়ী, শুধু তালা উপজেলায়ই গত তিন বছরে প্রায় ১ হাজার ২২১ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। গত দেড় বছরে মারা গেছেন আটজন। এর মধ্যে উপজেলার কৃষ্ণকাটি গ্রামে একই পরিবারের ছয়জন রয়েছেন।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাজিব সরদার জানান, তালা উপজেলায় ২০২৩ সালে ৩৭৯ জন, ২০২২ সালে ৪০৫ এবং ২০২১ সালে ৪৩৭ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব রোগী বিভিন্ন সময় তালা উপজেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে গত দেড় বছরে আটজন মারা গেছেন। তালা উপজেলায় মৃত্যু হার বেশি হলেও আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেশি কলারোয়া উপজেলায়। সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশ দূষণ পাওয়া গেছে সেখানকার ভূগর্ভের পানিতে। সাতক্ষীরা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, সাতটি উপজেলার ভূগর্ভের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩৪ শতাংশ, তালায় ৩৫, দেবহাটায় ৩৪, আশাশুনিতে ৪৫ এবং কালীগঞ্জে ২৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম এবং সহনীয় মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে শ্যামনগর উপজেলায়। সেখানে ভূগর্ভের পানিতে ৫ শতাংশ আর্সেনিক দূষণ রয়েছে। কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, তাদের অফিসের রেজিস্টারে ২৪ জন আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে ১০ নারী ও ১৪ জন পুরুষ। মৃতের কোনো সংখ্যা নেই। এদিকে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে মানুষের চর্মরোগ থেকে শুরু করে কিডনি, দন্ত্য, চুল পড়া ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, তার কৃষ্ণকাটি গ্রামের সুপেয় পানির অভাবে বিগত ২০ বছরে পানিবাহিত রোগ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে এক গ্রামের অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর্সেনিকের নাম শুনলেই আঁতকে উঠেন স্থানীয়রা। সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকের ব্যাধি বয়ে বেড়াচ্ছেন। সুপেয় পানির অভাবে নানা সমস্যায় ভুগছে এখানকার মানুষরা। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মানস কুমার মন্ডল বলেন, আর্সেনিক মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নিয়মিত আর্সেনিকযুক্ত পানি চর্মরোগ থেকে শুরু করে কিডনি, চুল ও দাঁত নষ্ট করে দেয়। যা ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তবে প্রাথমিকভাবে আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে তা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কিন্তু অবহেলা করলে মাবনদেহের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তিনি বলেন, যেসব এলাকার ভূগর্ভের পানিতে অতিমাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে, সেসব এলাকার মানুষ যেন পানি ফুটিয়ে পান করে। তাহলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি কম থাকবে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, আর্সেনিক একটি মারাত্মক বিষ। এটি শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য অনিরাপদ পানি পান থেকে বিরত থাকা ভালো। আর যদি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে অন্তত পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, জেলার সব উপজেলাতেই ভূগর্ভসহ সব পানির উৎসে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পানি সরবরাহে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন নামে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আর্সেনিকের ভয়বহতা কমে আসবে।