দর্শনায় আখ রোপণের ভরা মৌসুমে সার ও কীটনাশক সংকট
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনার ঐতিহ্যবাহী কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। এ চিনিকল এলাকায় আখ রোপণের ভরা মৌসুমে টিএসপি সার, বীজ, মাটিশোধন, কীটনাশক চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার কেরু সার গোডাউন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আখ রোপণের জন্য অর্ধশতাধিক কৃষক সার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। এরপরেও ২০-২৫ জন কৃষক সার আসবে ভেবে আলমসাধু ইজিবাইক ও পাখিভ্যান নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে কেরু চিনকলের গোডাউন থেকে সার না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে আখচাষি জিরাট গ্রামের মহাসিন আলী ২ একর, উজলপুরের রেজাউল ও বাদশা মিয়া ১ একর, আকন্দবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল ২ একর ও একই গ্রামের গোলাম আলী ১ একর, দক্ষিণচাঁদপুর গ্রামের বকুল হোসেন ৩ একর, দর্শনা পারকৃষ্ণপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ১ একর আখ লাগাবেন বলে জানান। কৃষকরা জানান, আমরা জমি প্রস্তুত করে রেখেছি, একটু শুষ্ক মৌসুম পেলেই আখ লাগানো শুরু করবো। কিন্তু নিতে এসে সার পাচ্ছি না। সার না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এর ফলে রোপণের উপযুক্ত সময় হারিয়ে ফেলছি। ফলে একদিকে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে মাঠের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে আখ রোপণের আগ্রহ পাচ্ছি না এবং আখ লাগাতে মন চাচ্ছে না। আখচাষিরা বলেন, ২০২১-২২ সালের পর থেকে আখ চাষ প্রায় ৫ গুণ কমে গেছে। পাঁচটি কারণে আখ চাষ কমে যাচ্ছে। সময় মতো মিল থেকে চাষিদের মধ্যে সার বীজ সরবরাহ না করা। মিলে সিডিএ সংকট।
বর্তমান বাজার দরের চেয়ে আখের মূল্য কম। উন্নত জাতের আখ না দিয়ে পুরাতন একই জাতের আখ সরবরাহ করা। অন্যদিকে ধান, পাট, ভুট্টার ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে আগামী মাড়াই মৌসুমে মিলটি মারাত্মক আখ সংকটে পড়তে পারে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। মিল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ এ পর্যন্ত আখ রোপণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২১ থেকে রোপন মৌসুমে মোট ৪ হাজার ৬২৭ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চিনিকলের ১০টি কৃষি ও পরীক্ষামূলক খামারে মাত্র ৯৮৯ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। বাকি মিলজোন এলাকার চাষিরা রোপণ করেছে ৩ হাজার ৬৩৮ একর। যেখানে গত রোপণ মৌসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও মিলজোন এলাকার আখচাষিরা মিলে ৮ হাজার ৫৩২ একর জমিতে আখ রোপণ করেছিল। যা মৌসুমের ৩ হাজার ৯০৪ দশমিক ৫০ একর জমিতে কম আখ চাষ হয়েছে। আখচাষ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে কেরু চিনিকল আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান, সহ-সভাপতি ওমর আলী জানান, প্রতিমণ আখের মূল্য ৩০০ টাকা না করলে আখ চাষ সম্ভব না। তাছাড়া গত রোপণ মৌসুমে চাষিরা সময় মতো সার না পাওয়ায় আখ রোপণ অর্ধেকে নেমেছে। এরপর কেরুর কৃষি খামারের জমি কর্তৃপক্ষ আখ রোপণ না করে সাধারণ কৃষকের কাছে লিজ দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর কেরুতে এবারই প্রথম আখচাষ কম হলো বলে তারা জানালেন। ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে আখ রোপণের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। তার বিপরীতে দণ্ডায়মান আখ আছে কেরুর নিজস্ব জমিতে ২৭ হাজর টন, পাবলিক আখচাষীদের দণ্ডায়মান আখ আছে ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। মোট ৭০ হাজার টন আখ মাড়াই হবে। কেরু এন্ড কোম্পানির জি এম (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূইয়া জানান, এবার কেরু এ্যান্ড কোম্পানী আখের মূল্য নিধারন করেছে মন প্রতি ২শ ৪০ টাকা। চাষিরা জানান, বর্তমানে আখের মূল্য সবচেয়ে কম। চাষীরা আরও বলেন, আখের মন যদি ৩০০ টাকা হতো তাহলে চাষিরা আবার আখ লাগাবে। যদি আখের মৃল্য বৃদ্ধি না করে তাহলে চাষিরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেরু সার গোডাউন ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান বলেন, টিএসপি সার ও বীজ, মাটিশোধন কীটনাশক সংকট রয়েছে। গতকাল সোমবার অন্যান্য সারের সঙ্গে ১০০ বস্তা টিএসপি বিতরণ করেছি। সার ও কীটনাশক সংকট থাকায় আজ কৃষকদের সার দিতে পারছি না। তবে সার আশার অপেক্ষায় আছি। এদিকে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (কৃষি) আশরাফুল হক ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি আমরা দেখছি। সার চাহিদার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে সার চলে আসবে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, টিএসপি সারের চাহিদা ডিডি করেছি। খুলনা থেকে জানালে আমরা গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। তিনি আরো বলেন, বীজ ও মাটিশোধন কীটনাশক চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন সরবারহ করে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পৌঁছে যাবে।