ভোলার বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোলপাড়-রতনপুর সড়কের পাশে এক স্বপ্নবাজ যুব উদ্যোক্তা মাইনুদ্দিন মফিজ গড়ে তুলেছেন ৩ একর জমিতে মাল্টা, কমলা বাগান। সাথে আছে থাই পেয়ারা। এরইমধ্যে বেশিরভাগ মাল্টা বিক্রি হয়ে গেছে। কমলা হলুদ রং ধারণ করা শুরু হয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে বিক্রি করা যাবে। উভয় ফল দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও মিষ্টি ও সুস্বাদু। এর পাশেই আছে নানা জাতের বিশাল সবজি বাগান। সবজি বাগানের মধ্যে কাটা নালায় আছে বিভিন্ন প্রকারের মাছ। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ নান্দনিক এ কৃষি ফার্ম দেখতে আসেন।
সমগ্র ফার্ম পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তা মাইনুদ্দিন মফিজ ২০২২ সালে তিনি সরকারিভাবে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের মধ্যে নিরাপদ সবজী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ অর্জন করেন। কৃষির ওপর বিভিন্ন স্তরে প্রশিক্ষণ রয়েছে তার। মাইনুদ্দিন মফিজ জানান, এ বাগানে প্রাথমিকভাবে বারি-১ মাল্টা চাষ করা হয়েছে। এছাড়া কমলার জাতের মধ্যে আছে ভূটানি, চায়না থ্রি, কাশ্মীরি-১। তিনি স্থানীয় বাজারে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। কমলা বিক্রি নামবে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ প্রজাতিগুলো উত্তরবঙ্গের নাটোর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে সংগ্রহ করেন তিনি। অতিবৃষ্টির কারণে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। অনুকুল আবহাওয়া পেলে আগামী সিজনে এ উৎপাদন আরো বেশী হবে। তিনি আরো জানান, শতভাগ বিষমুক্ত ফল উৎপাদন তার লক্ষ্য। আমি করছিও তা-ই। দেখা যায় বেশিরভাগ ফল আমরা আমদানি করি। তা-ও স্বাস্থ্যকর না। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ফলকে আর খাবার উপযোগী রাখেনা। আরো ২০ একর নতুন বাগান করার কাজ চলছে। সেখানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে। অন্যান্য ফলের মধ্যে আছে আড়াই হাজার থাই পেয়ারা, আপেল কুল, টক বড়ই। এছাড়া উন্নত প্রজাতির চারাও উৎপাদন করছেন তারা। যে কেউ স্বল্প মূল্যে ফার্ম থেকে কিনতে পারবেন। থাই পেয়ারা সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে। মফিজ পড়াশোনায় এসএসসির গণ্ডি পেরোতে পারেনি। বর্তমানে ২ বছরের এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি। কৃষক মফিজ আরো জানান, আমি নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। সে সাথে চ্যালেঞ্জও। কৃষি কাজের প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে তার। বরই বাগান, থাই পেয়ারা, মাল্টা বাগান, সবজী বাগানে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো আমার বিনিয়োগ। দীর্ঘদিনের সঞ্চয়, পৌরসভায় দুই এলাকার জমি বিক্রির টাকা, এলাকায় জমি বিক্রি করে কৃষির দিকে ঝুঁকে পড়ছেন তিনি। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি পছন্দসই ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু ওই দিকে আমার মন টানে না। এ নিয়ে কিছুটা পারিবারিক মনোমালিন্যও হয়েছে। এ কাজে আমি আনন্দ পাই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, ভোলার মাটি অন্যান্য জেলার তুলনায় ভালো। বিশেষ করে এ ধরনের মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তদারকিটা ঠিক থাকলে পোকাণ্ডমাকড়ের আক্রমন, ছত্রাক আক্রমনসহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। তবে বেশি লাভের আশায় ফল যথাসময়ের আগে তুললে ফলের গুনাগুন ঠিক থাকে না। মফিজের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। কৃষিবিভাগ প্রযুক্তি, পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে তার পাশে আছে। যদি তার লোনের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রেও কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করবে।