কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন ৭২৮ মিটার বেড়িবাঁধ
ঝুঁকিতে মহাসড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সাহেবনগর এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ৭২৮ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে পড়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। পদ্মার পানির উচ্চতা গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে স্রোত আরো তীব্রভাবে কূলে আঘাত হানছে। ফলে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়েছে ভাঙনের আতঙ্ক। কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, যেভাবে নদীভাঙন হচ্ছে, তাতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরো ৩০ থেকে ৩৫ মিটার ভেঙে গ্রামের দিকে চলে আসার শঙ্কা আছে। তখন কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক থেকে নদীর দূরত্ব হবে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। তাই বলা যায়, এই মহাসড়ক এখন ঝুঁকির মধ্যে। কুষ্টিয়ার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। পানির স্রোতও বেশি। যেভাবে ভাঙছে তাতে মহাসড়ক খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছে।
ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এতেই সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। পাউবোর ভাষ্য, মিরপুর উপজেলার কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের পাশ দিয়ে পদ্মা নদী বয়ে গেছে। মহাসড়ক ও নদীর মাঝখানে উপজেলার মুন্সিপাড়া, সাহেবনগর, মির্জানগর ও রানাখড়িয়া এলাকা। এসব এলাকার বসতবাড়িসহ আবাদি জমি আছে। গত ৫ বছরে এসব এলাকায় অন্তত ১ হাজার ১৮৮ একর ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে পানি বাড়ার সময় প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ১৮৬ মিটার প্রামের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সবই ফসলি জমি। ১২ অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ মাটির বেড়িবাঁধের প্রায় ৭২৮ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ছয়টি টাওয়ারের মধ্যে তিনটি টাওয়ার ভেঙে পড়ে গেছে। গত দুই দিনে মির্জানগর এলাকার একটি কবরস্থানের বেশির ভাগ অংশ বিলীন হয়েছে। মির্জানগর কবরস্থান কমিটির কোষাধ্যক্ষ আশাফুল ইসলাম বলেন, কবরস্থান আর টেকানো গেল না। এখন বসতবাড়ি কীভাবে রক্ষা হবে, সেটাই চিন্তা করছেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রোয়েনে বাধা পেয়ে নতুন গতিপথের সন্ধানে প্রমত্ত পদ্মার ভয়াল আগ্রাসনে ভাঙছে নদীর ডান পাড়, ফলে বর্তমানে বিপন্ন হয়ে পড়েছে ওই জনপদ। এরই মধ্যে সরকারি বেসরকারি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অবকাঠামো বিলীন হয়েছে পদ্মার গর্ভে। পদ্মার ডানপাড়স্থ কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া দুই ইউনিয়নের ৭ কিলোমিটার এলাকায় প্রবল ভাঙনে কৃষিজমি, বাড়িঘর, স্কুল মাদরাসা বিলীন হয়েছে এরই মধ্যে। সম্প্রতি জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কয়েকটি টাওয়ার ভেঙে পড়েছে নদী গর্ভে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সংযুক্ত একমাত্র মহাসড়কটিও চরম ঝুঁকিতে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া কর্তৃপক্ষের দাবি রূপপুর গ্রোয়েনের কারণে পদ্মা নদীর ডান তীরে সৃষ্ট ভাঙন এলাকার সুরক্ষা বা তীর রক্ষায় প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে দরপত্র প্রক্রিয়া ও কার্যচুক্তি পূর্ব কার্যক্রম চলছে। তবে অনুমোদিত প্রকল্প এলাকা বহির্ভূত উজানে আরো প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গৃহিণী শিল্পি খাতুন বলেন, আর কত কাঁদবো? কোথায় গিয়ে কাঁদবো। সব শেষ হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, পদ্মার ডান তীরের এই অংশে পুরো স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে এবং ঘূর্ণনের ফলে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা ভাঙন রোধে জিও এবং টিউব দিয়ে প্রাথমিক ভাঙন রোধে চেষ্টা করছি। স্রোত ও গভীরতা বেশি হওয়ায় জিও বস্তা ও টিউব দিয়ে ভাঙন রোধ দুরূহ হচ্ছে। যেন মানুষের ক্ষতি না হয় এজন্য চেষ্টা করছি। আমরা ৭০০ মিটার ভাঙন এলাকায় ৫০ হাজার জিও ব্যাগ এবং ৫৫০টি টিউব ফেলছি। তাৎক্ষণিকভাবে এটা টেকসই না। তবে আমরা ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করেছি। যা এরই মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ পর্যায়ে রয়েছে। পদ্মার ডান তীরে ভাঙন কবলিত ৯ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে অনুমোদনপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এই অর্থ বছরেই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হামিদ।