সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নকল ও ভেজাল সারে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। নিম্নমানের কীটনাশকও ছড়িয়ে পড়েছে বাজারে। এ অবস্থায় ফলন বিপর্যয়, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ ঠেকাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ ভেজালরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে চলতি মৌসুমে সবজি অন্যান্য চাষাবাদে উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। জানা যায়, উপজেলার ছোট-বড় হাটবাজার ছাড়াও এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ছোট দোকানগুলোতেও অত্যন্ত নিম্নমানের ভেজাল সার এবং নামি-বেনামি কোম্পানির কীটনাশক বিক্রি করা হচ্ছে।
আলু, পেঁয়াজ, শাকসবজি ক্ষেতে আগাছা এবং ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে বাড়তি ফলনের আশায় কম দাম ও নজরকাড়া মোড়ক দেখে এসব কীটনাশক ও সার কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ কৃষকরা।
শুধু তাই নয়, সারের নতুন বস্তা খুললে দেখা মিলে সারে মিশ্রিত নুড়ি পাথরের গুঁড়া, ইটের গুঁড়া ও বালুর মিশ্রণ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সার ব্যবসায়ীদের অনেকে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নকল দস্তা সার এবং নিম্নমানের কীটনাশক অবাধে বিক্রি করছেন। আসল-নকলের বিষয়টি যাচাই না করে তাদের কাছ থেকে সার ও কীটনাশক কিনছেন অধিকাংশ কৃষক। জমিতে ব্যবহারের পর কৃষকরা বুঝতে পারছেন এসব ভেজাল সার ও নিম্নমানের কীটনাশকের কার্যকারিতা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলায় বিসিআইসি ডিলার আছেন ১২ জন। খুচরা সার ডিলার প্রতি ওয়ার্ডে ১ জন করে রয়েছে তাতে ১০৯টি ওয়ার্ডে১০৯জন , বিএডিসি সার ডিলার ১৭ জন এবং কীটনাশক বিক্রি করেন প্রায় ৫শতাধিক জনের মতো। তাদের কেউ কেউ বৈধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধভাবে নকল ও ভেজাল সার এবং নিম্নমানের কীটনাশক বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার কাশিমাড়ীর এলাকার কৃষক আ. হাই বলেন, কয়েকদিন আগে কাশিমাড়ী বাজার থেকে এক বস্তা ডলোমাইট সার ক্রয় করি। পরে জমিতে সার প্রয়োগ করার আগে বস্তা খুলে দেখি সারের সঙ্গে সিমেন্টের দানা, বালু ও পাথরের গুঁড়ার মতো দানামিশ্রিত রয়েছে। পরে দ্রুতত সার দোকানিকে অবগত করলে কিছু করার নেই বলে জানান তিনি। অনেক কথা কাটাকাটির পর তিনি বলেন, কোম্পানিকে এ সার ফেরত দেব। কোম্পানি যদি পরিবর্তন করে দেয়, তাহলে পাবেন! নচেৎ কিছুই করার নেই।
গোবিন্দপুর নামের আরেক কৃষক বলেন, কফি ক্ষেতে আগাছা ও পোকামাকড় দমনে ওষুধ দিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। গাছের পাতা সাদা হয়ে গেছে। আদম আলী নামের এক কৃষক বলেন, আমরা তো সার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিশ্বাসের ওপর সার-কীটনাশক কিনে থাকি। তারা যে ভেজাল জিনিস বিক্রি করে না আসল জিনিস সেটা কেমনে আগে বোঝব। জমিতে ব্যবহার করার পর তো বোঝা যায় সার আসল ছিল না নকল। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিক সার ব্যবসায়ী বলেন, কীটনাশক কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা আমাদের বলেন ওষুধে কাজ না হলে টাকা ফেরত। এ সরল বিশ্বাসে আমরা কৃষকদের কাছে ওষুধ বিক্রি করি। তারা পরিবর্তন করে না দিলে, আমরা দেব কীভাবে? । সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল রিফাত বলেন প্রান্তিক কৃষকরা এসব ভেজাল সার মানসম্মত মনে করে জমিতে প্রয়োগ করেন। কিন্তু ভেজাল সারের ফলে তারা কাঙ্খিত ফসল পায় না, এতে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে। ভেজাল সার মজুত ও বিক্রি রোধে অভিযান করবেন বলে তিনি জানান ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা বলেন বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি কৃষি কাজে ব্যবহারকৃত সারকে ভেজাল বলার ক্ষমতা রাখে না। আগে সেটা পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠিয়ে তারপর বলা সম্ভব। আমরা বাজারের সার সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে ভেজাল ডলোমাইট সার সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর মাধ্যমে জব্দ করিয়েছি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।