অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ৬০০ মিটার নদীতে বিলীন
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা নদীতে অবৈধ চুম্বক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে তীব্রভাঙন শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে এরই মধ্যে উপজেলার সাহারখোলা ও আব্দুল্লাহচরের ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার বাঁধসহ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ভাঙন আতঙ্ক। ভাঙন দেখতে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দাদের নদীপাড়ে জড়ো হতে দেখা গেছে। বালুমহালের নির্ধারিত ১ কিলোমিটারের বাইরে গিয়ে মেঘনার বিভিন্ন স্থান থেকে বালু তোলার কারণে ভাঙন তৈরি হয়েছে বলে জানায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৫ এপ্রিল উপজেলার কাতলার চর মৌজার দক্ষিণ পাশে ১ কিলোমিটার চর ড্রেজিংয়ের ইজারা পান এক প্রভাবশালী। চর ড্রেজিংয়ের নামে তার প্রতিষ্ঠান মেঘনা থেকে বালু তোলার মহোৎসবে মেতেছে। শত শত অবৈধ চুম্বক ড্রেজার ও বাল্কহেড দিয়ে বালু তোলার কারণে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয় ভাঙন, তা অব্যাহত রয়েছে। এতে সাহারখোলা ও আব্দুল্লাহচরের ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার অংশ বিলীন হয়ে গেছে। বালুমহালের সীমানা ছড়িয়ে নদীজুড়ে বালু তোলা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় জানান, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। না প্রকাশ না করে তারা জানান, একটি কোম্পানির মালিকের কাছে নদীর বালু বিক্রি করে চক্রটি শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। নদীপাড় ঘেঁষে বিরাট এলাকাজুড়ে বালু তোলার কারণে ভাঙন দেখা দেয়। এতে করে হুমকিতে রয়েছে উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মাঝেরচর, রায়পুরা ইউনিয়নের সাহারখোলা ও শ্রীনগর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহচর। বালু তোলা অব্যাহত থাকলে এলাকাগুলো বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে কাতলারচর বালুমহালের ইজারাদার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ভাঙনের খবর শুনে ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি দেখে নদী থেকে ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো সরিয়ে নেন আশরাফ হোসেন সরকারের লোকজন। বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানোর পরও বালু তোলা বন্ধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উপজেলার সাহারখোলা, মির্জাচরসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় অবাধে চলছে বালু উত্তোলন।
এখনই বন্ধ করা না গেলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না। নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কাতলার চর মৌজার দক্ষিণ পাশের এক কিলোমিটার চর ড্রেজিংয়ের জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল। যা রিপোর্টে বলা আছে। পরে আমরা সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। চর ড্রেজিংয়ের ইজারা নিয়ে সীমানা অতিক্রম করে নদীজুড়ে বালু উত্তোলন করে আসছিল ইজারাদার। রাতের বেলাও সেখানে ড্রেজিং হচ্ছে। ভাঙনের জন্য নদী থেকে বালু তোলাকে দায়ী করেন তিনি।
তিনি বলেন, পাউবোর একটি টিম ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানান, ভাঙনে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি নিদের্শনা দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে। ভাঙনের জন্য যদি বালু উত্তোলন দায়ী হয়ে থাকে, তবে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান তিনি।