হঠাৎ করেই শিশুদের নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে কুষ্টিয়ায়। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশুওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে প্রায় ৪০০’র অধিক শিশু ভর্তি থাকছে। বিগত প্রায় একমাস ধরে হাসপাতালে এ অবস্থা বিরাজ করছে। ঘরে ঘরে শিশুরা ঠান্ডা, জ্বর ও সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় একশ’ শিশু নিউমোনিয়া, জ্বর, ঠান্ডা, কাশি কিংবা শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এদিকে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের। শয্যা সংকটের কারণে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শত শত শিশুকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে সামনের বারান্দার মেঝে শিশু রোগীতে ঠাসা। বারান্দার পাশে মেডিসিন ওয়ার্ড এবং শিশু ওয়ার্ড ইউনিট-২ এ শিশু রোগী রাখা হয়েছে। গাদাগাদি করে সেখানে বিছানা করে শিশুদের রাখা হয়েছে। হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের ভেতরেও শিশু রোগীদের ভিড় লক্ষ্যণীয়। বারান্দার মেঝেতে শুইয়ে রাখা আট মাসের শিশু ফাহিমের পাশে বসে আছেন মা মৌসুমী খাতুন। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরেই তার ছেলের জ্বর। তবে কোনো উন্নতি না হওয়ায় বুধবার সকালে তিনি ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। হাটশ হরিপুরের ফরিদা আক্তার তার তিন বছর বয়সি মেয়ে নাদিয়াকে গত সোমবার হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে নাদিয়ার গায়ে জ্বর। রয়েছে শ্বাসকষ্ট। গ্রাম্য ডাক্তারকে দেখিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু কোনো উন্নতি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। নাদিয়ার মতো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত শিশুর প্রায় একই অবস্থা। এদিকে অতিরিক্ত শিশু রোগীর চাপ সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলেশন ওয়ার্ডকে শিশু ইউনিট-২ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এতেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের ওয়ার্ডের মেঝেতেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৪ অক্টোবর থেকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ওটির সামনে একটি রুমে অস্থায়ীভাবে শিশু রোগী রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের ৪টি রুমে মাত্র ২০টি শয্যা রয়েছে। অথচ এই ২০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০’র অধিক শিশু হাসপাতালে ভর্তি থাকছে। হাসপাতালে কর্মরত ৯ থেকে ১০ জন চিকিৎসককে এই বিপুল সংখ্যক শিশু রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হচ্ছে। এছাড়া ৭ থেকে ৯ জন নার্স প্রতি শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে দাবি করেছেন রোগীর স্বজনরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৪০১ জন। এর মধ্যে ছেলে শিশু ২৪৯ জন এবং মেয়ে শিশু ১৫২ জন। হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. রকিউর রহমান জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় শুরু হয়।
তবে চলতি অক্টোবর মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে শিশু রোগীদের চাপ ভয়াবহ রকম বৃদ্ধি পেয়েছে। গেলো দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ৪ শতাধিকেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকছে। আর গড়ে প্রতিদিন নতুন করে শতাধিকেরও বেশি শিশু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৫০ শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে থাকে। এর বাইরেও প্রতিদিন বহির্বিভাগে আরো ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। কুষ্টিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও রাজবাড়ী জেলার রোগীরাও চিকিৎসাসেবা পেতে এই হাসপাতালে ছুটে আসেন।