চলতি বছরের গত সেপ্টেম্বর মাসে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য মতে ঈশ্বরদীতে ৪৯২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ গতবছরের ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এখানে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ২৫৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ২৩২ দশমিক ৯ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এখানে। রাতদিন লেগে থাকা এই বৃষ্টির বারিধারায় তলিয়ে গেছে ফুলকপি, বাধাকপি, ঢ্যাঁড়স, পটল, বেগুন, মরিচ, পেঁপে, শশা, মুলা, করলা এবং শিমের চাতালসহ কৃষকের আগাম সবজি খেত। তবে মাঠ ঘাটের পানি শুকাতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। সবজিব খেতে আটকে থাকা এই পানি শুকানোর সাথে সাথে জলাবদ্ধ জমির সবজি গাছ গুলোও শিকড় পঁচে শুকাতে শুরু করেছে। এতে অধিক লোকসানের দৃশ্যমান ভবিষ্যতের হাতছানিতে সবজি চাষিদের দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে কপালে। সরেজমিনে ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী, বক্তারপুর, দাদপুর, আওতাপাড়া, কদিমপাড়া, নওদাপাড়া, জয়নগর, মিরকামারী, ছলিমপুর, আড়কান্দি, রামনাথপুর, বালিয়াডাঙ্গা, মুলাডুলিসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সবজি ক্ষেতের এমনই দৃশ্য দেখা গেছে। ভাড়ইমারী বড়বটতলা এলাকার কৃষক নাসির হোসেন বলেন, প্রতিবারের মতো এবারো আগাম জাতের ফুল ও বাধাকপি করে ছিলাম প্রায় ৪ বিঘা। ফুল কপিতে গুটিও হয়েছিল।
হয়ত আর দিন পনেরো গেলেই বিক্রির উপযোগী হয়ে যেত। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ২ বিঘা গাজর করেছিলাম। সেটাও ধুয়ে গেল বৃষ্টির পানিতে। শেখেরদাইড় এলাকার কৃষক মজনু মিঞা বলেন, এ মৌসুমে মূলা আর আগাম ফুল কপি চাষ করতে সার বিষের দোকানেই বাকি ৬০ হাজার টাকা। কামলার মজুরি নিজের খাটুনির তো কোনো হিসাবই নেই। এই ঘাটতি পোষাবো কেমনে সেটা কেবল আল্লাহ্ জানেন। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ৮ শত ৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শিমের চাষ হয়েছে। শিমচাষের স্বর্গরাজ্য খ্যাত মুলাডুলি ইউনিয়নের রামনাথপুর, মুলাডুলি, পতিরাজপুর, বেতবাড়িয়া, বাঘহাছলা, রামেশ্বাহপুর, গোয়াল বাথান, লক্ষীকোলা, সড়াইকান্দি, শেখপাড়া, নেকড়হাটা, অঞ্চল ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বিচতলা তৈরি, শিমের মাচানের জন্য বাঁশ, পাঠকাঠি, লোহার তার, পাটের সুতা, পর্যাপ্ত কীটনাশক, সার এবং উপযুপরি শ্রমিকসহ শিম চাষে বিঘা প্রতি ১ মৌসুমে খরচ হয় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এবার টানা বৃষ্টির কারনে শিমের জমিতে পানি আটকা ছিল অনেক দিন। এখন পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে গাছ গুলো শুকাতে শুরু করেছে। যে হারে গাছ মারা যাচ্ছে তাতে করে প্রায় অর্ধেকের বেশি শিমগাছ নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি।
আর বেঁচে থাকা বাকি অর্ধেক গাছও তেমন ফল দেবে বলে কোনো ভাব পাচ্ছি না। উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সবজি চাষি বাসিদুল ইসলাম জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে আগাম মুলা আবাদ করেছিলেন। টানা বৃষ্টিতে জমির মুলা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক ইমরান জানান, অতি খড়ায় মার খেলাম করলা আর শষা চাষে। ঢ্যাঁড়সেও তেমন কিছু করতে পারি নি। এবার শীতের সবজি করতে গিয়েও বৃষ্টির পানি আমাদের সাথে শত্রুতা করে বসল। আমাদের খেতের শিমগাছ অর্ধেকের বেশি মরে গেছে। এবার কীটনাশকসহ বাকীদের ঋণ শোধ করব কিভাবে সেই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, গাছের গোড়ায় অধিক সময় জলাবদ্ধতার কারণে গাছের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গাছ গুলোকে রক্ষা করা না গেলেও যেগুলো এখনো বেঁচে আছে সেগুলোতে ছত্রাকনাশক (পঁচনরোধক) স্প্রে করতে হবে।