উপকূলীয় অঞ্চলে সুপারির বাম্পার ফলন

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

বিশ্ব ঐতিহ্য বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত ঊর্বর ভূমি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা সুপারির জন্য বিখ্যাত। এ উপজেলার লোকজনের সারা বছরের আয়ের বড় অংশ আসে সুপারি বিক্রি থেকে। প্রতিবছরই এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে সুপারি সারা দেশে ছড়িয়ে যায়।

এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। মোরেলগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের সবকটিতেই উৎপাদন হয় সুপারির। এক সময় সারা দেশে সরবরাহ করা হতো মোরেলগঞ্জের সুপারি। তবে সেই অবস্থা না থাকলেও এখনো প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে সুপারি মোরেলগঞ্জ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। উপকূলে সুপারির সবচেয়ে বড় মোকাম মোরেলগঞ্জ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের থেকে ব্যবসায়ীরা সুপারি নিয়ে বিক্রির জন্য মোরেলগঞ্জ শহরে গড়ে উঠা সুপারির হাটে আসেন। এখানে প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার দুদিন হাট বসে।

তবে শুকনো সুপারির পিক মৌসুম ফাল্গুন থেকে আষাঢ় পর্যন্ত এবং কাঁচা সুপারি ভরা মৌসুম শ্রাবণ থেকে পৌষ পর্যন্ত। এ সময় বেশির ভাগ সুপারি কেনাবেচা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন সুপারি কিনতে। মোরেলগঞ্জ থেকে নিয়মিত সুপারি সংগ্রহ করেন। এখান থেকে প্রায় প্রতিদিন ট্রলার ও ট্রাকবোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় সুপারি। মোরেলগঞ্জবাজারের সুপারি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের ফরাজী, আব্দুল হালিম ফরাজী, বাদশা মিয়া, সোহরাব হোসেন মোহন বলেন, মোরেলগঞ্জে প্রতি হাটে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারির কেনা-বেচা হয়। প্রতি বছর এই মৌসুমে বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে মজুদ করে থাকে।

শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ সুপারি এলসির মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গত মৌসুমে সুপারীর দাম ছিল অনেক ভালো। তবে এবার সুপারির দাম বাড়তির দিকে। বর্তমান মৌসুমে ২১ ঘা (২১০টি) এক কুড়ি কাঁচা সুপারির মূল্য ৪৬০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় অনেক বেশি। মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম কবির জানান, চাষিদের সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সীড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরীব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ‘মাটি এবং আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে এখানকার সুপারি আকারে অনেক বড় এবং সুস্বাদু হয়। এ বছর উপজেলার সুপারি বাগানের মালিকরা সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যা করায় সুপারির এমন ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় ৫০০ থেকে ৬০০ টন সুপারি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকার বেশি হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সুপারি কিনে ৬০ শতাংশ পানিভর্তি পাত্রে ভিজিয়ে রাখেন। ৪০ শতাংশ সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদারজানান, ‘মাটি এবং আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে এখানকার সুপারি আকারে অনেক বড় এবং সুস্বাদু হয়। বলেন, বৈশাখণ্ডজ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারিগাছে ফুল আসে। সেই ফুল থেকে সুপারি হয়। মাটি সুপারি চাষের জন্য খুব উপযোগী। আমরা সব সময় কৃষকদের উচ্চমূল্য সম্পন্ন ফসল চাষে উৎসাহ প্রদান করি। এ জন্য কারিগরি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হয়। এ কারণে জেলায় দিন দিন চাষি বৃদ্ধি পাচ্ছে।