ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আগাম শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন

কৃষকের মুখে হাসি
আগাম শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন

কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় আগাম সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার কৃষকরা। সবজির দাম ভালো থাকায় খেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হচ্ছে। চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজির বাম্পার ফলনের সম্ববনা দেখছেন কৃষকরা। সে সাথে ফলন ভাল পাওয়ার পাশাপাশি দাম ভাল পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। সাটুরিয়া উপজেলার বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে শীতকালীন আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মূলা, করলা, পটল, লাল ও পালং শাক, শসাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি। ভোর থেকে কৃষকেরা ফসলের ক্ষেতের পরিচর্য়ায় ব্যস্ত থাকেন। রাজধানীর সঙ্গে দুরত্বকম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এখানকার উৎপাদিত সবজিগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। এদিকে এর মধ্যে বাজারেও উঠতে শুরু করেছে কৃষকের চাষ করা আগাম শীতকালীন সবজি।

উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাটুরিয়ায় গতবছর আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল ৬৮০ হেক্টর। এ বছর আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে ৭৪৪ হেক্টর জমিতে। এ বছর শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে। সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে সবজি খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। কেউ ফুলকপি খেতে আগাছা কাটছে আবার কেউ করলা খেতে কীটনাশক দিচ্ছে। এ ছাড়াও যারা সবজি চাষে পিছিয়ে পড়েছেন তারা জমি প্রস্তত, বীজ বপণে তোড়জোড় শুরু করেছেন।

কৃষকরা বলছেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে পোকা মাকড়ের আক্রমণ, বৃষ্টিপাতসহ বিভিন্ন ঝুঁকি থাকে। তারপরও বাজারে ভালো দাম থাকায় লাভ হয় ভাল। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। উপজেলার চামারখাই গ্রামে কৃষক মজিবর রহমান বলেন, এবার ১৮ বিঘা জমিতে শীতকালীন আগাম ফুলকপি আবাদ করেছে সে। আর বাকি ১২ বিঘা জমিতে মধ্যমকালীন ফুলকপির চারা রোপণের জন্য জমি তৈরি করা ও চারাগুলোর প্রস্তুত করেছে। সর্বমোট ৩০ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ হবে তার। এক সপ্তাহ পর থেকেই আগাম জাতের ফুলকপি ফলন তুলবে সে। এবারে ফুলকপি মৌসুমে ৫০ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রির টার্গেট তার। আশা করছে অনুকূল আবহাওয়া আর পাইকারি বাজারে ফুলকপির দরদাম ভালো পেলে সব খরচ বাদে এ বছর তার ২৫-৩০ লাখ টাকার মতো লাভ হবে। উপজেলার ফুকুরহাটি আইরমারা গ্রামের কৃষক কালা চান বলেন, এ বছর ৭০ শতাংশ জমিতে ফুল কপির চাষ করেছি। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কপি বাজারে বিক্রি করতে পারবো। বৃষ্টিপাতের কারণে এ বছর খরচ একটু বেশি হয়েছে। তারপরেও সব খরচ বাদে কপি বিক্রি করে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ হবে। কৃষক আবদুল হালিম বলেন, প্রতিবছরই সবজি আবাদ করি। এবছর ৫ বিঘা জমিতে নানা ধরনের সবজির চাষ করেছি। দুই বিঘা ফুলকপি, এক বিঘায় শসা আর বাকি দুই বিঘায় করলা ও মুলা চাষ করেছি। আগাম ফুলকপি ১০ থেকে ১২ দিন পর বিক্রি করতে পারব, আশা করছি এ বছরও সবজিতে ভালো লাভ হবে। সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, এ বছর ফুলিকপি, লাউ, লাল শাক ও সিমের আবাদ করেছি ৬ বিঘা জমিতে। গত বছর ফুলকপিতে বেশ লাভ হয়েছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। পাইকারি বাজারের লালশাক, লাউ ও সিম বিক্রি করেছি ৪০ হাজার টাকার মত। এ বছরও জিনিসপত্রে দাম অনেক বেশি, আশা করছি বাজারদর ভালো থাকলে আগাম সবজি চাষে বেশ লাভবান হব আমি। সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতি বছর সাটুরিয়া উপজেলায় শীতকালীর আগাম সবজির আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগাম শীতকালীন সবজি মাঠ থেকে তোলার সাথে সাথে কৃষকরা বপন করে শীতকালীন সবজির। আগাম চাষ করা সবজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে আল্লাহর রহমতে আবহাওয়া ভালো আছে বৃষ্টি না হলে ফলন বেশ ভালো হবে। এবং প্রতিনিয়তই কৃষকের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত