ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপথ

আতঙ্কে এলাকাবাসী
নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপথ

ছোট ফেনী নদীতে নির্মিত মুছাপুর রেগুলেটর বিলীন হওয়ার পর থেকে নদীর দু’পাড় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙনে রাস্তাঘাট ফসলি জমি, ফলের বাগান ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনের কারণে হুমকিতে রয়েছে অজস্র বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নোয়াখালী ও ফেনীর সীমান্তবর্তী মুছাপুর এলাকায় রেগুলেটর না থাকায় জোয়ারের তোড়ে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া, চর দরবেশ, বগাদানা ও চর মজলিশপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদীতীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে নদীভাঙনের কারণে বেশ কয়েকটি রাস্তা এবং ছোট ছোট কালভার্ট ও সেতু ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে দেখা যায়, গত দুই মাসে উপজেলার অন্তত ২০টি এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়; কিন্তু এখনো স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের আউরারখিল ও দাসপাড়া এলাকায় নদীতীরের মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। গাছগুলোও কেটে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ নদীতীরে বাঁশ ও গাছ দিয়ে বাঁধ তৈরি করে বসতবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছেন। আউরারখিল দাসপাড়া গ্রামের কয়েকটি পরিবার ঘরের কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এক গৃহকর্তা বলেন, নদীটি তাদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ছিল।

গত আগস্ট মাসে হঠাৎ বন্যায় মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ার পর থেকে জোয়ারের সঙ্গে প্রতিদিন বাড়িঘরে পানি ঢুকে যায়। রাতে বাড়িতে থাকতে পারেন না। জোয়ারের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। তাদের আশপাশে শতাধিক বাড়ি ও বেশ কিছু গাছের বাগান ছিল। হঠাৎ বাড়িঘরের সঙ্গে নদীভাঙনে গাছপালাও বিলীন হয়ে গেছে। তার ঘরের বেশির ভাগ অংশ নদীতে চলে গেছে। যে কোনো সময় পুরো বাড়ি নদীতে চলে যেতে পারে। হঠাৎ ভাঙনের শিকার হয়ে পরিবারগুলো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। মাত্র দুই মাসের মধ্যে কয়েকশত মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। চোখের সামনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

তারা কিছুই করতে পারছেন না। ওছমানীয়া হাইস্কুলের শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, আউরারখিল গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে ছোট ফেনী নদী বয়ে গেছে। বন্যার পর থেকে নদীতে প্রবল স্রোত বইছে। প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। এখন পর্যন্ত গ্রামের চার ভাগের দুই ভাগ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। এখন যেভাবে ভাঙছে, তাতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যেতে পারে। চরছান্দিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন খোকন জানান, রেগুলেটর ধসে যাওয়ার পর থেকে বাড়ীঘর, কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট বিলীন হচ্ছে। কিন্তু সরকারি কোন পদক্ষেপ নেই। চর দরবেশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, এলাকাবাসী বালুভর্তি বস্তা ফেলে ও বাঁশ-গাছ দিয়ে নদীতে ছোট বাঁধ নির্মাণ করে নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছেন। এসব বাঁধেও কোন কাজ হচ্ছে না। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। ছোট ফেনী নদীর সোনাগাজী অংশে নদীভাঙনের স্থানগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন কর্মকর্তা এএম রকি। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান জানান, মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীনের পর সোনাগাজীর মজলিশপুর, বগাদানা, চর দরবেশ ও চরছান্দিয়ার কয়েকটি স্থানে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে শত শত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত