প্রাচীন কাল হতে উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতো নানান ঐতিহ্যবাহী উপকরণ। যা ছিলো ঐতিহ্যর ধারক গ্রাম বাংলার গৃহস্থের সচ্ছলতা ও সুখ সমৃদ্ধির প্রতিক। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ততা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আধুনিক পণ্যের ব্যবহার সম্প্রসারণের কারণে এগুলো বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্তপ্রায় আমাদের এসকল ঐতিহ্য সংরক্ষণ, টিকিয়ে রাখা বা ব্যবহার বৃদ্ধিতে উপকূলীয় গ্রামীণ ঐতিহ্যেরে বিলুপ্তপ্রায় সামগ্রী রক্ষায় প্রদর্শনী ও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত সোমবার বেলা ৩টায় শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম জেলেখালী গ্রামে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, সবুজ সংহতি ও বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র যৌথ উদ্যোগে উপকূলের হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিলুপ্তপ্রায় সামগ্রী রক্ষায় প্রদর্শনী ও সংলাপে সভাপতিত্ব করেন জেলেখালী কৃষক সংগঠনের সভাপতি কৃষক ভুধর চন্দ্র মন্ডল। প্রদর্শনীতে পশ্চিম জেলেখালী গ্রামের জেলেথালী কৃষক সংগঠন, শাপলা ও জবা কৃষি নারী সংগঠন ৩টি স্টলে বিভক্ত হযে উপকূলীয় এলাকার হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন গ্রামীণ নিদর্শন বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে প্রদর্শন করেন।
প্রদর্শনীর মধ্যে ছিল- লাঙল, জোয়াল, লাঠি, ঠুশি, মই, পাখে, নিড়ানি, দা, কুড়াল, বঁটি, কাশি, হামান দিস্তা, শিল, নোড়া, পোলো, ঝুড়ি, বাজারা, খারা, হোঙা, সাবল, ডোল, চাঙারি, মাটির মাঠে, কলস, পিতলের বিভিন্ন উপকরণ, হারিকেন, টেমি, ঝাতি, বিভিন্ন ধরনের জাল, পূজারসামগ্রী, কাস্তে, ছেমত, হাসো, দোড়া, পাটের বস্তা, চালন, কুলো, হুকো, কলকে, বাটি, মাটে কলস, কাসার জিনিষ, ঢেকি, দাড়িপাল্লা, বিচলি কাটার বঁটি, ঘণ্টা, তামার পয়সা, বাবুই পাখির বাসা, লাউয়ের খোল, পিড়ি, রেডিও, টর্চ লাইচ, মাটির ব্যাংক, রুটির তৈরির তাবা, পিড়ি, ধামা, হরিনের শিংসহ প্রায় ৩৫০ ধরনের উপকরণ। এসময় প্রদর্শনকারীরা জানান যে, আমরা একসময় কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিলাম এবং জীবন-জীবিকা, জ্ঞান, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে এ সকল উপকরণ ব্যবহার করতাম। কালের বিবর্তনে সেগুলো আজ রূপকথার গল্প হয়ে গেছে। আমরা এখনও গ্রাম অঞ্চলে এগুলোর ব্যবহার কম করলেও তা সংরক্ষণে রাখার চেষ্টা করছি। এগুলো সম্পর্কে আমাদের সন্তানদের পরিচিতি করার জন্য আমরা এ কর্মসূচি আয়োজন করেছি। প্রদর্শন পরবর্তী সংলাপে হারিয়ে যাওয়া এ সকল গ্রামীণ নিদর্শন টিকিয়ে রাখতে এগুলো গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মুন্সীগঞ্জ ইউপি সদস্য দেবাশিষ মন্ডল, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাছুম বিল্লাল, সাংবাদিক মাছুম বিল্লাল, কৃষানি লতা রানী মন্ডল, ডাক্তার, স্বেচ্ছাসেবক গৌতম সরদার, শিক্ষার্থী জবা বারসিক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ জোয়ারদার ও বিশ্বজিৎ মন্ডলসহ প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, কালের বিবর্তনে উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রতিনিয়িত হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এলাকাতে নানা ধরনের সম্পদ যেমন ছিল, তেমনি সেসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছিল নানা ধরনের উপকরণ সেটি ছিল পরিবেশবান্ধব। কিন্তু আধুনিক কৃষির আগ্রাসন, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে।