ভোলার চরফ্যাশনে সার্জন পদ্ধতিতে সবজি ও মাছ চাষে সাফল্য চাষিরা। জৈবসার ব্যবহার করে নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি বিক্রি করে অধিক মুনাফা হওয়ায় উৎসাহিত হয়ে এ পদ্ধতিতে ঝুঁকছে। উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে ৪০ জন কৃষক প্রায় শত শত হেক্টর জমিতে সম্মিলিতভাবে সার্জন পদ্ধতিতে শশা, শিম, লাউ, পেঁপে, কুমড়ো ও লালশাক এবং টমেটো উৎপাদন করেন। প্রতি একরে সবজি উৎপাদনের খরচ হয় প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মতো। আর লাভ হয় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। নালায় মাছ চাষে সারা বছর পানি থাকায় সেচ সুবিধায় খরচ কম হওয়ায় সেখানে লাভবান হচ্ছে চাষিরা।
উপজেলার হালিমাবাদ গ্রামের কৃষক আক্তার মহাজন জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব ও কেচোঁ সার দিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে সার্জন পদ্ধতিতে আবাদ শুরু করেন। এ বছরে চাষাবাদ বৃদ্ধিতে প্রায় ৫ একর জমিতে সার্জন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। প্রথমে তিনি জমি থেকে মাটি কেটে উঁচু আড়া বাঁধা হয়। আড়ার ফাঁকে নালা তৈরি করে আড়ার ওপর বিভিন্ন সবজি চারাগাছ রোপণ করেন। পাশাপাশি আড়ার নালাতে তেলাপিয়া, রুই, পাঙ্গাস, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির কার্প জাতীয় মাছ চাষ করেন তিনি। এ পদ্ধতিতে বর্ষা মৌসুমে পানিতে জমির আড়া ডুবে না। বিষমুক্ত হওয়ায় সার্জন পদ্ধতিতে মাছ ও সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হওয়া যায়।
এই পদ্ধতিতে সারাবছর হাট-বাজারে বিষমুক্ত সবজি বিক্রি করার পাশপাশি নিজের পরিবারেরও সবজির চাহিদা পূরণ করা যায়। ঘোষেরহাট গ্রামের কৃষক খলিল মিয়া জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক ঝড় তুফানের সময়ে লবণাক্ত পানিতে ধানের ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা সার্জন পদ্ধতি ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। তারা ৪০ জন কৃষকের সমন্বয়ে শত হ্যাক্টর জমিতে সম্মিলিতভাবে সার্জন পদ্ধতিতে শশা, শিম, লাউ, পেঁপে, কুমড়ো ও লালশাক এবং টমেটো উৎপাদন করেন। প্রতি একরে সবজি উৎপাদনের খরচ হয় প্রায় আশি হাজার থেকে এক লাখ টাকার মতো। আর লাভ হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। নালায় মাছ চাষে সারাবছর পানি থাকায় সেচ সুবিধায় খরচ কম বলে মনে করেন চাষিরা। মাছ চাষে একর প্রতি আয় হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। উপজেলা কৃষি অফিস রোকনুজ্জামান বলেন, চলতি বছর এ উপজেলায় প্রায় ৮ শত হেক্টর জমিতে সার্জন পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করেছেন কৃষকরা। জলাবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের সাথে মোকাবিলায় সক্ষম হয়ে উঠছে কৃষকরা। কীটনাশক ব্যবহার না করে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় বাজারে বিষমুক্ত সবজির চাহিদা বেশি। তবে চাষিরা জানান, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে উপজেলা কৃষি অফিস যদি জলবায়ু সহিষ্ণু চাষাবাদে সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দেয় তাহলে এ অঞ্চলের কৃষকরা অধিক মুনাফা ও ভোক্তারাও খুশি হবে।