ছাত্র আন্দোলনে আহত রানার সুচিকিৎসা হচ্ছে না
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পারভেজ উজ্জ্বল, নীলফামারী
জীবনে স্বপ্ন ছিল বাবা-মা আর দুইবোনকে সঙ্গে নিয়ে পরিবারের হাল ধরবে, সুন্দরভাবে সংসার পরিচালনা করবে বাবার পাশাপাশি থেকে। সেই কারণে কাজের খোঁজে ঢাকায় পাড়ি জমান ২০ বছর বয়সি রানা ইসলাম। ঠিক তক্ষুনি শুরু হয়, শেখ হাসিনার পতনের ডাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত ২৫ জুলাই ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়ে নিজেই এখন শয্যাসায়ী। পরিবারের হাল ধরা হলো না তার। নীলফামারী সদরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের তিলবাড়ী ময়দানপাড়া এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে রানা ইসলাম (২০)। গত জুলাইয়ের আন্দোলনে অংশ নিয়ে হারাতে হয় তার একটি হাত। অপর হাতটিও অচলের পথে। গোটা শরীরে পোড়ার ক্ষত চিহ্ন। ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে তিনমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর অর্থের অভাবে সেখানে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পেরে গত ১৮ অক্টোবর রানাকে বাড়িতে নিয়ে আসে তার বাবা।
আহত রানা ইসলাম জানান, ‘গত ২৫ জুলাই ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় শেখ হাসিনার পতনের ১ দফার ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেই। এ সময় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ পুলিশের গুলি চলতে থাকে আমাদের ওপর। পুলিশের গুলি থেকে বাঁচতে সবার সঙ্গে আমিও পালানোর চেষ্টায় দৌড় দেই। কিন্তু হঠাৎ একটি বিকট শব্দের পর আমি আর কিছু বলতে পারি না। যখন আমার জ্ঞান ফিরে আমি উঠে দেখি হাসপাতালে। আমার একটি হাত নেই। অপর হাতেও কোনো শক্তি নেই।
রানা আরো বলেন, ‘আমি খুবই একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমার বাবা একজন দিনমজুর। বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসার চালায়। তাই বাবাকে সংসার চালাতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য ঢাকায় যাই কর্মের খোঁজে। সেখানে গিয়ে আন্দোলনের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্যদের সঙ্গে আমিও ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমি এখন পঙ্গুত্ববরণ করেছি। আমার পেছনে চিকিৎসার জন্য বাবার যতটুকু সঞ্চয় ছিল, সব কিছু ব্যয় করেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি।
সরজমিনে জানা যায়, রানার আহত হওয়ার খবর পায় ঘটনার একদিন পর তার পরিবারের লোকজন। যার সঙ্গে কাজের খোঁজে ঢাকায় গিয়েছিল সে খবর দেয়। রানার বাবা মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত ২৫ জুলাই ঢাকায় আন্দোলন চলাকালে আমি রানাকে বারবার ফোনে কল দেই; কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। পরের দিন যার সঙ্গে কাজে গিয়েছিল, সে আমাকে ফোন? দিয়ে বলে আপনার ছেলের অবস্থা ভালো না।? জলদি ঢাকা আসেন। ঢাকায় গিয়ে দেখি আমার ছেলের কোনো বোধ জ্ঞান নেই। তার একটি হাত নেই, গোটা শরীরে পোড়ার ক্ষত চিহ্ন। আহত রানার মা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ‘রানার বাবা আমাকে ফোন দিয়ে বলে ছেলের এই করুণ অবস্থার কথা’। ওইদিনে আমি বাড়িতে থাকা গরু-ছাগল বিক্রি করে রানার চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠিয়ে দেই। আবার রানাকে আরো ডাক্তার দেখাতে হবে, ওষুধ কিনতে হবে, সে চিন্তায় আমাদের চোখের ঘুম হারিয়ে গেছে।
রানার মা আরো বলেন, ‘আমার সন্তান তিনমাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। আন্দোলনে আমার ছেলে একটি হাত নষ্ট হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত কেউ একটু খবরও নিল না। আমার ছেলে বেঁচে আছে কি না মরে গেছে’। সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতাও করা হয়নি। নীলফামারী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম বলেন, তার পরিবারের লোকজন আমাদের শরণাপন্ন হলে সহায়তা করা হবে এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। সেখানে গেলে তার চিকিৎসা হবে।