ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী তরুণ উদ্যোক্তা

মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী  তরুণ উদ্যোক্তা

মাশরুম চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কুষ্টিয়ার তরুণ উদ্যোক্তা মো. সাইফুল ইসলাম (৩৭)। প্রতিমাসে তিনি বিক্রি করছেন অন্তত লাখ টাকার মাশরুম। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তার খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশ কজন শ্রমিকের। তার এমন সাফল্যে এলাকায় অনেকেই ঝুঁকছেন মাশরুম চাষের প্রতি। সাইফুল ইসলামের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস (কাস্টমস মোড়, পশ্চিমপার্শ্বে) এলাকায়। মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনি ২০১৮ সালে নিজ বাড়িতেই গড়ে তোলেন ‘এমএস মাশরুম সেন্টার’ নামের মাশরুম খামার। বর্তমানে এ খামারে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে ১০/১২ কেজি মাশরুম। সরেজমিন জানা যায়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যলয় সংলগ্ন ‘মাশরুম সেন্টার, সাভারের ‘মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট’ এবং মাগুরার ‘ড্রীম মাশরুম সেন্টার’ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন সাইফুল ইসলাম। এ সময়ই তিনি মাশরুম চাষের প্রতি আকৃষ্ট হন। ২০১৮ সাল থেকে পুরোপুরি মাশরুম চাষে মনোনিবেশ করেন। ওই সময় মাত্র ৬ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন এ ব্যবসা। বাড়িতেই গড়ে তোলেন মাশরুমের খামার। এরপর আস্তে আস্তে ধরা দেয় সাফল্য। সাইফুল জানান, বর্তমানে এ ব্যবসায় তার ৬/৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। তার মাশরুম চাষ প্রকল্পের নাম ‘এমএস মাশরুম সেন্টার’। ওয়েস্টার মাশরুম এর পাশাপাশি ঔষধি গুণসম্পন্ন ঋষি মাশরুমেরও উৎপাদন হয় এখানে। কাঠের গুড়া, গমের ভূষি, চুন ও পানির মিক্সিং করে (প্যাকেটজাত) তৈরি স্পন থেকে ১২ মাসই পাওয়া যায় ওয়েস্টার মাশরুম। অপরদিকে খড়ের তৈরি সিলিন্ডার থেকে শীত মওসুম ছাড়া এ মাশরুম পাওয়া যায় না। সাইফুল প্রতিদিন খামার থেকে বিক্রি করছেন ১০/১২ কেজি ওয়েস্টার মাশরুম। মাসে বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ কেজির ওপর মাশরুম। যার প্রতি কেজি পাইকারী মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এ ছাড়াও তিনি ঔষধি গুণসম্পন্ন ‘ঋষি মাশরুম’ উৎপাদন করেন প্রতি মৌসুমে ২০ থেকে ৩০ কেজি।

এর প্রতি কেজি মূল্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। সাইফুল বলেন, উপকরণসহ ২ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের একটি খড়ের সিলিন্ডার তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৫০ টাকা। এ থেকে মাশরুম পাওয়া যায় অন্তত দেড় কেজি। প্রতি কেজি মূল্য যদি ২০০ টাকাও ধরা হয়; তাহলে এর দাম আসে ৩০০ টাকা। তিনি জানান, টিস্যুকালচার, মাদার, স্পন ও খড়ের সিলিন্ডার পর্যন্ত মাশরুম চাষের চারটি ধাপ রয়েছে। মাদারকালচারের টিস্যু তিনি সংগ্রহ করেন বাংলাদেশ মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট সাভার থেকে। এরপর এখানে মাদারকালচার করা হয়। টিস্যুকালচার (বীজ) থেকে চারধাপ পেরিয়ে মাশরুম তুলতে সময় লাগে একমাসের মতো। প্রতিদিন যাতে ২০/২৫ কেজি মাশরুম এখানে উৎপাদিত হয় সেভাবেই তিনি খামারটি গড়ে তুলছেন। ভবিষ্যতে তেমন সুযোগ পেলে বৃহৎ পরিসরে খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার। সাইফুলের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে কুষ্টিয়া শহরের মোল্লাতেঘড়িয়ার মো. তাজু শুরু করেছেন মাশরুম চাষ। তিনি ভাই ভাই ক্ষুদ্র সমবায় ব্যবসায়ীক সামিতির মাধ্যমে কয়েকজনকে নিয়ে করছেন এই চাষ। সাইফুল বলেন, ‘মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার।

পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে পারলে আমরা যেমন উপকৃত হবো, তেমন আমাদের সমাজ উপকৃত হবে’। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রূপালী খাতুন জানান, ‘মাশরুম চাষ একটি লাভজনক পেশা। যে কেউ চাইলে মাশরুম চাষ করে লাভবান হতে পারেন। কৃষি অফিস থেকে চাষি, বেকার যুবক ও গৃহবধূদের মাশরুম চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে’। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ সুফী মো. রফিকুজ্জামান বলেন, দেশে অর্থকরী ফসল মাশরুম চাষের রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং ভূমিহীন। তাদেরকে মাশরুম চাষে সম্পৃক্ত করতে পারলে কর্মসংস্থান ও আয়ের পথ তৈরি হবে। মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করতে পারলে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত